সবুজ হোসেন নওগাঁ
![]() |
নওগাঁর পোরশা উপজেলার বন্ধুপাড়া এলাকায় তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রায়হান আলম তাঁর বাগানের রসালো আম দেখিয়ে দিচ্ছেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নওগাঁ-ধান আর চালের পাশাপাশি এখন আমের জন্যও যেন নতুন পরিচয় গড়ছে। বরেন্দ্রভূমির সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলার নানান এলাকার আম বাগানগুলো সারি সারি আম গাছ আর ঝুলছে নানা রঙের রসালো আম।
দেশীয় প্রাচীন আমের জাতের সঙ্গে বিদেশি আমের চাষেও নওগাঁর কৃষকদের আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে। সুন্দর আকৃতি, গুণগত মান আর মিষ্টি স্বাদের জন্য এসব আমের দামও ভালো পাওয়া যায়, যা কৃষকদের উৎসাহ বাড়াচ্ছে।
নওগাঁর মাটি ও আবহাওয়া বিদেশি আমের চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় আম বাগান বাড়ছে। ফলস্বরূপ, ভোক্তাদের মধ্যে বিদেশি আমের চাহিদাও বেড়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর নওগাঁ জেলায় প্রায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। সেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন। এর মধ্যে ১২০ হেক্টর জমিতে বিদেশি আমের বাগান, যা থেকে বছরে প্রায় দেড় হাজার টন আম পাওয়া যায়। এর বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
বরেন্দ্রের এই অঞ্চল আগে ধান আর গম চাষের জন্য পরিচিত ছিল। পানির অভাব থাকায় আমন ধানই ছিল প্রধান ফসল। কিন্তু গত দশকে এখানে আম চাষের প্রসার ঘটেছে, এখন বরেন্দ্রভূমি যেন সবুজ আমের বাগানে ঢেকে গেছে।
এই অঞ্চলে আমরপালি, গোপালভোগ, ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, বারী-৪ সহ নানা দেশীয় জাতের পাশাপাশি বিদেশি আমের প্রজাতি যেমন পালমার, মিয়াজাকি, চিয়াংমাই, কিউজাইও চাষ হচ্ছে। এসব আম রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা এবং বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
![]() |
গাছে ঝুলছে রসালো আম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সাপাহারের বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা ৭৫ বিঘা জমিতে আমরপালি, ল্যাংড়া, বারী-৪ ও বিদেশি আমের বাগান করছেন। ২০১৮ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি আম চাষ শুরু করেছেন। তার বাগানে ব্যানান ম্যাংগো, রেড পালমার, মিয়াজাকি, চিয়াংমাই, কিউজাইসহ আট ধরনের আম ঝুলছে।
সোহেল রানা বলেন, 'বিভিন্ন দেশ থেকে আমের কাটিং সংগ্রহ করে বাগান সম্প্রসারণ করেছি। ব্যানান ম্যাংগো আমাদের প্রধান প্রজাতি, যা প্রতি মন ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দাম ভালো হওয়ায় ভবিষ্যতে বিদেশি আম চাষ আরও বাড়াতে চাই।'
বহু কৃষক বিদেশি আমের প্রতি ঝুঁকছেন কারণ এগুলো বারোমাসি এবং দ্রুত ফল দেয়। ফলন ভালো হওয়ায় লাভের সুযোগও বেশি। আম দেখতে আকর্ষণীয়, স্বাদে উৎকৃষ্ট হওয়ায় ভোক্তাও এগুলো কিনতে বেশি আগ্রহী।
পাতারি গ্রামের আম চাষী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'তিন বছর আগে ২৫ কাঠায় ব্যানান ম্যাংগো চাষ শুরু করেছিলাম। দাম ভালো হওয়ায় এখন সাড়ে তিন বিঘায় বাগান বড় করেছি। গত বছর প্রতি মন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এবারও আশা করি দাম ভালো থাকবে'।
আরেক কৃষক মো. রাকিব হোসেন বলেন, 'ব্যানান ম্যাংগো, মিয়াজাকি ও কিউজাই আমের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। বাগান বাড়ছে এবং রপ্তানিতে ভালো আয় হচ্ছে। ভবিষ্যতে বিদেশি আমের চাহিদা আরও বাড়বে।'
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, 'নওগাঁ এখন দেশের প্রধান আম উৎপাদন অঞ্চলের এক। বিদেশি আম চাষে এখানকার মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আমরা তাদের পূর্ণ সহযোগিতা দিচ্ছি।'