প্রতিনিধি বগুড়া

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের কাছে যোগদান পত্র দেন বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক কুদরত-ই-জাহান (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। বুধবার তোলা  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

আইন পাস হওয়ার দুই যুগ পর অবশেষে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে। উপাচার্য আজ বুধবার যোগদান করেছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের জায়গা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর ফলে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে দেশের ৫৫তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কুদরত-ই-জাহান। গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমতিক্রমে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১-এর ১০(১) ধারা অনুসারে কুদরত-ই-জাহানকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। যোগদানের পর থেকে তাঁর মেয়াদকাল চার বছর হবে এবং বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।

জানা যায়, ২০০০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক ও ২০০৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কুদরত-ই-জাহান। ২০০৪ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০১৭ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ২০১০ সালে জাপান থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকনেতা হিসেবে পরিচিত।

২৪ বছর পর আলোর মুখ

বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয় ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে। তবে এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার এবং পুনরায় আওয়ামী লীগের সরকার থাকলেও উপাচার্য নিয়োগ, স্থায়ী ক্যাম্পাস, নিয়োগ কিংবা অবকাঠামো—কোনো কিছুই হয়নি। দীর্ঘদিন আইন কার্যকর না হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আইন, ২০০১-এর ক্ষমতাবলে ২০২৩ সালের ১১ মে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এতে ২০২৩ সালের ২২ মে থেকে আইনটি কার্যকর করার কথা বলা হয়।

বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস কোথায় হবে, তা এখনো জায়গা চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমও এখনো শুরু হয়নি। তবে আপাতত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০০১ সালে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হওয়ার সময় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে জামালপুর মৌজায় স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৎকালীন বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর উপজেলার নুরইলের বিল এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তৎকালীন সরকারের একাধিক মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চূড়ান্ত করতে প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শনও করেছিলেন। তবে এরপর আর এ কার্যক্রম এগোয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, বগুড়ার মানুষ শিক্ষিত, সংস্কৃতিমনা এবং বিজ্ঞানমুখী। বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস কোথায় স্থাপিত হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমও শুরু করা যায়নি। আপাতত অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে। জায়গা চূড়ান্ত হওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।