নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যে বৈঠক হতে যাচ্ছে, সেটিকে স্বাগত জানিয়েছে নাগরিক কোয়ালিশন। এই বৈঠকে সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে তারা।

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিক কোয়ালিশন বলেছে, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করার মাধ্যমে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের প্রতি অনাস্থা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তবে এপ্রিল মাসে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাস্তবভিত্তিক সমস্যা রয়েছে। অন্যদিকে ওই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রধান ধাপগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব থাকায় মানুষ শঙ্কামুক্ত হতে পারছে না।

এমন প্রেক্ষাপটে নাগরিক কোয়ালিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ (পথনকশা) প্রস্তাব করেছে। যেখানে আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

নাগরিক কোয়ালিশন বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এপ্রিল মাসের নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল অনড় অবস্থানের কারণে দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশে ও বিদেশে গোপনে ও প্রকাশ্য অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ অবস্থায় ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের মুখে একটি অত্যন্ত আশাপ্রদ ঘটনা।

উল্লেখ্য, নাগরিক কোয়ালিশন হলো রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কারে নাগরিক উদ্যোগ। নাগরিক কোয়ালিশনের সঙ্গে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি যুক্ত।

সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব

নাগরিক কোয়ালিশনের প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে জুলাই চার্টারকে (সনদ) রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তি হিসেবে নেওয়া; উচ্চকক্ষে আনুপাতিক ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন; সাংবিধানিক নিয়োগে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা; তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃস্থাপন; সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারী আসনে নির্বাচন ইত্যাদি।

প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে যে বৈঠক হতে যাচ্ছে, তাতে সাংবিধানিক স্বৈরাচার ঠেকাতে এবং নিরপেক্ষ নিয়োগ ও ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে বলে আশা করছে নাগরিক কোয়ালিশন।

নির্বাচনের প্রস্তাবিত রোডম্যাপ

নির্বাচন ও সংস্কারের প্রধান ধাপগুলো আমলে নিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন করার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে নাগরিক কোয়ালিশন। এই রোডম্যাপ সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাঠিয়েছে তারা।

বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এপ্রিলেই কেন নির্বাচনের সময় প্রস্তাব করা হয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা সরকারের তরফ থেকে এখনো পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেছে নাগরিক কোয়ালিশন। তারা বলেছে, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সংস্কার ও নির্বাচনের প্রধান ধাপগুলো কবে কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তার কোনো পরিকল্পনা বা লক্ষ্য সরকার এখনো ঘোষণা করেনি। এই ধাপগুলোর যেকোনো একটি বাস্তবায়নের শিথিলতা এপ্রিল মাসের নির্বাচনকেও পিছিয়ে দিতে পারে, এই আশঙ্কা মোটেও অমূলক নয়।

নাগরিক কোয়ালিশনের প্রস্তাবিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ভোটার তালিকাসংক্রান্ত বিশেষ অর্ডিন্যান্স (২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত যাঁদের বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে অর্ডিন্যান্স) জারির শেষ তারিখ আগামী ৩০ জুলাই। জুলাই চার্টার, আইনি ও সাংবিধানিক সংস্কারসংক্রান্ত ঐকমত্যে পৌঁছানোর তারিখ আগামী ৩১ আগস্ট। সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত গেজেটের শেষ তারিখ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। ভোটার তালিকা হালনাগাদের শেষ তারিখ আগামী ৩০ অক্টোবর। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার শেষ তারিখ চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর। মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১ ডিসেম্বর।

নাগরিক কোয়ালিশনের রোডম্যাপে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রস্তাবিত তারিখ আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি।