প্রতিনিধি বগুড়া
![]() |
বগুড়া জিলা স্কুল | ফাইল ছবি |
দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে বগুড়া জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) আবদুল মালেককে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিষদের জরুরি সভায় ৫১ জন শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বগুড়া জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিমা নাসরিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আবদুল মালেক বর্তমানে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিষদের সভায় ২০২৫ সালের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার কভার পেজ, প্রশ্নপত্র ছাপার কাজে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীদের গালমন্দ করাসহ নানা অসদাচরণের অভিযোগ ছিল। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আবদুল মালেককে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষা কমিটির তোয়াক্কা না করে আবদুল মালেক একক ক্ষমতাবলে প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপানোসহ পরীক্ষাসংক্রান্ত নানা খাতে বেশি খরচ দেখিয়ে অর্থ হাতিয়েছেন। একক সিদ্ধান্তে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি প্রশ্নপত্রে বড় রকমের বিভ্রাট ঘটে। ফলে নতুন করে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হয়। আবদুল মালেক কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি না করে একক কর্তৃত্বে প্রশ্নপত্র তৈরি করতেন। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা ও খবরদারিতে অন্য শিক্ষকেরা অতিষ্ঠ ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত তিনজন শিক্ষক বলেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বগুড়া জিলা স্কুলের সুনাম দেশজুড়ে। শিক্ষক আবদুল মালেকের উচ্ছৃঙ্খল ও অশিক্ষকসুলভ আচরণে শুধু শিক্ষক নয়; শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। শুধু তাঁর কারণে বিদ্যালয় সুনাম ও ঐতিহ্য হারাচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে বগুড়া জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল মালেকের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বগুড়া জিলা স্কুলে প্রভাতি ও দিবা শাখায় শিক্ষার্থীসংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এখানে পরীক্ষায় ভালো করার জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা থাকে। আবদুল মালেকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিগত বার্ষিক পরীক্ষায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষকের দাপট দেখিয়ে পছন্দের শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষার আগেই মৌখিকভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা, মূল্যায়নের সময় পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়া, একই নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পছন্দের শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম এগিয়ে দেওয়া, ভর্তি পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতিসহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।