[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

অতিরিক্ত ভাড়া না মেলায় স্পিডবোট সেবা বন্ধ মালিকদের

প্রকাশঃ
অ+ অ-

পন্টুনে না রেখে যমুনার পাড়ে বেঁধে রাখা হয়েছে অর্ধশতাধিক স্পিডবোট। আজ মঙ্গলবার কাজীরহাট নৌঘাট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ঈদযাত্রার ১০ দিন ২১০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা নির্ধারণের আবদার করেছিলেন স্পিডবোট মালিকেরা। দাবি না মানা হলে আগামী বুধবার (৪ জুন) থেকে স্পিডবোট চালানো বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা; কিন্তু এর এক দিন আগেই আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল থেকে এই নৌপথে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। এতে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাড়ির পথে রওনা দেওয়া যাত্রীরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও স্পিডবোট মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাট থেকে মানিকগঞ্জের আরিচা পর্যন্ত নৌপথের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে বিআইডব্লিউটিএ এই নৌপথে স্পিডবোটের ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ওই সময় ঘাটের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে। তাঁরা সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে জনপ্রতি ২৫০ টাকা ভাড়া আদায় করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্পিডবোট ঘাটের নিয়ন্ত্রণ যায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের হাতে। তাঁরাও একই হারে অর্থাৎ ২৫০ টাকা করে আদায় করতে থাকেন; কিন্তু গত এপ্রিলে বিআইডব্লিউটিএ দেশের বিভিন্ন নৌপথের সঙ্গে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে এই নৌপথের ভাড়া ২১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু এবারও সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে বোটমালিকেরা ২৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করতে থাকেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সপ্তাহখানেক আগে বোটমালিকেরা সরকারনির্ধারিত ২১০ টাকা ভাড়া আদায়ে বাধ্য হন। সেই থেকে ২১০ টাকা করেই ভাড়া আদায় চলে আসছিলেন।

এদিকে গত ২৯ মে বেড়া উপজেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারনির্ধারিত ভাড়ায় ও নিরাপদে যাত্রীদের যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর পরদিনই ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া আদায়ের অনুমোদন না দেওয়া হলে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হবে বলে জানায় বোট মালিকপক্ষ। সে সময় তাঁরা জানিয়েছিলেন, ৩০০ টাকা ভাড়া আদায়ের অনুমোদন পাওয়া না গেলে তাঁরা আগামী বুধবার (৪ জুন) থেকে স্পিডবোট চালানো বন্ধ করে দেবেন; কিন্তু এর এক দিন আগেই আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) থেকে তাঁরা কাজীরহাট-আরিচা নৌপথের সব স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেন।

বোটমালিক পক্ষের ভাষ্য, ঈদের আগের কয়েক দিন ঢাকার দিক অর্থাৎ আরিচা থেকে কাজীরহাটের দিকে যাত্রীর ভিড় থাকলেও কাজীরহাট থেকে আরিচা যাওয়ার পথে যাত্রী থাকেন না। আবার ঈদের পরে ঘটে ঠিক তার উল্টো। এ কারণে তাঁদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজীরহাট-আরিচা স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি ও বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রইজউদ্দিন বলেন, ‘ঈদের সময় প্রতিটি যাতায়াতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা লোকসান হওয়ায় মালিকেরা স্পিডবোট চালাতে চাচ্ছেন না। এর পরও ঈদের সময় যাত্রীদের কথা চিন্তা করে লোকসান দিয়ে হলেও স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিচ্ছি। সম্ভব হলে আজ (৩ জুন) থেকেই স্পিডবোট চলাচল যাতে চালু হয়, সে ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছি।’

আজ মঙ্গলবার কাজীরহাট নৌঘাটে গিয়ে দেখা যায়, স্পিডবোটের জন্য নির্ধারিত পন্টুনে কোনো স্পিডবোট নেই। আর সেখান থেকে কিছুটা দূরে যমুনার পাড়ে বেঁধে রাখা আছে অর্ধশতাধিক স্পিডবোট।

আরিচা থেকে লঞ্চে কাজীরহাটে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রিয়াজ উদ্দিন, মনসুর আহমেদসহ সাত-আটজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমনিতেই এই নৌপথে স্পিডবোটের ভাড়া বেশি। এর ওপর বোটমালিকদের ভাড়া বাড়ানোর দাবি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দীর্ঘদিন তাঁরা (বোটমালিকেরা) ২১০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকা আদায় করেছেন। তখন তো তাঁদের অনেক লাভ হয়েছে। আর তাঁরা সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে ১২ জনের জায়গায় ১৪ থেকে ১৫ জন যাত্রী নিয়মিতভাবে বোটে তুলে থাকেন। তা ছাড়া তাঁরা যে ঈদযাত্রায় শুধু একদিক থেকেই যাত্রী পাওয়া যাওয়ার কথা বলছেন, তা ঠিক নয়। অপর দিক থেকেও পাঁচ থেকে ছয়জন হলেও যাত্রী পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর নগরবাড়ী-কাজীরহাট ঘাট কার্যালয়ের পোর্ট অফিসার আবদুল ওয়াকিল বলেন, ‘ঈদের সময় এক পাশে যাত্রীর ভিড় থাকলেও অন্য পাশে যাত্রী থাকেন না। সেই হিসাবে তাঁদের ঈদের সময়ে ভাড়া বাড়ানোর আবেদনে হয়তো যুক্তি আছে; কিন্তু এই দাবিতে ঈদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁদের স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়টি দুঃখজনক। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর স্পিডবোটের বিকল্প হিসেবে লঞ্চ ও ফেরির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে।’

উল্লেখ্য, ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার যোগাযোগব্যবস্থা সহজ ও সময় বাঁচানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালের দিকে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে লঞ্চ ও ফেরির পাশাপাশি স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়। এই নৌপথে ৪টি ফেরি ও ৯টি লঞ্চ চলাচল করে। এর সঙ্গে এখন ১২ আসনের ১৪২টি স্পিডবোট চলাচল করে। স্পিডবোটে এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দেওয়া যায় ১৭ থেকে ২০ মিনিটে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন