নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর লাখো মানুষ জড়ো হন সংসদ ভবন এলাকায়। তাঁদের কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় পতাকা | পুরনো ছবি |
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের নাম তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। ফাউন্ডেশনের কাছে যে তথ্য এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে অনেকেই আসলে আহত নন, কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে নিজেদের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
ফাউন্ডেশন মনে করছে, এই ধরনের কাজ শুধু আহতদের অবমাননা করে না, শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদাও হ্রাস করে। তারা জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি তাড়াহুড়া ও দুর্বলতার কারণে অনেক ভুল হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনে যারা আহত বা শহীদ হয়েছেন, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং হাসপাতালে চিকিৎসার প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় কাগজ জেলা প্রশাসক বা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যারা আহত বা শহীদ হয়েছেন, তাদের নাম যাচাই-বাছাই শেষে তালিকায় রাখা হয়েছে।
কিন্তু অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, অনেকেই আন্দোলনে অংশ নেননি বা আহত হননি, তবুও তাদের নাম এমআইএস তালিকায় রয়েছে। কেউ কেউ অন্য কোনো সময় দুর্ঘটনায় আহত বা মারা গেছেন, তারপরও নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে দাবি করেছেন।
অবাক করার বিষয় হলো, বন্ধুর ছুরিকাঘাতে মারা যাওয়া, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত, কিংবা চাঁদাবাজির সময় গণপিটুনিতে মারা পড়ার মতো ঘটনা রয়েছে শহীদদের তালিকায়।
ফাউন্ডেশন জানায়, ভুয়া তথ্য দিয়ে সরকারি সাহায্য নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, কেউ মুচলেকা দিয়ে ছাড় পেয়েছেন।
ফাউন্ডেশনের প্রধান কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসাইন বলেন, 'যাচাইয়ের পর আমরা ১৯ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার চিঠি দিয়েছি। প্রায় ৭০ জন ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে তালিকায় জায়গা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।'
তাদের দেওয়া উদাহরণে রয়েছে উত্তরা সেক্টরের মো. ইলিয়াস হোসেন হিরণ ও ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. লিটন, যারা ভুয়া কাগজ দেখিয়ে আহত দাবির মাধ্যমে সরকারি অর্থ নিয়েছেন।
গ্রাহক সেবা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, 'প্রাথমিক সময় দ্রুত টাকা বিতরণের কারণে পুরোপুরি যাচাই সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক ভুয়া আহতও টাকা পেয়েছে। তাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নেয়া হয়েছে এবং মামলা হয়েছে।'
তিনি আরও জানান, 'তারা একটি দল গঠন করতে চান, যারা ভুয়া আহতদের শনাক্ত করবে। সিভিল সার্জনের অফিসও চাইলে এই কাজ করতে পারে।'
গণঅভ্যুত্থান-সংক্রান্ত বিশেষ সেলের যুগ্ম সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, 'শহীদদের তালিকায় তেমন সমস্যা নেই, তবে আহতদের তালিকায় মাঝে মাঝে অভিযোগ আসে। এসব অভিযোগ দ্রুত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়।'