{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

জন্মনিবন্ধনের তথ্য বলছে, বরিশালে র‍্যাবের অভিযানের গুলিতে নিহত ও আহত দুজনের বয়স ১৭

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি বরিশাল

ময়নাতদন্ত শেষে নিহত সিয়াম মোল্লার লাশ স্বজনেরা নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সাদা পোশাকে র‍্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় গুলিতে হতাহত দুজনই জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী শিশু-কিশোর।

যদিও নিহত কলেজছাত্র সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও র‍্যাবের পক্ষ থেকে করা মামলায় তাদের ওই বয়স উল্লেখ করা হয়।

দুই শিক্ষার্থীর বয়স বাড়িয়ে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না বলে দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিব মোল্লা এই বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য অনুযায়ী, নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‍্যাব-৮-এর এক কর্মকর্তা  বলেন, বয়সের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই এ ধরনের বিভ্রম হতে পারে। কারণ, অভিযানে যাওয়া র‍্যাবের সদস্যরা ওই দুজনকে চিনতেন না। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে র‍্যাব সদস্যদের ওপর হামলা করেছিলেন। এ জন্য আত্মরক্ষার্থে তাঁরা গুলি করতে বাধ্য হন। হামলায় র‍্যাবের দুজন সদস্যও আহত হয়েছেন।

র‍্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পুলিশের ভাষ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ায় সাদা পোশাকে র‍্যাব-৮-এর মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিয়াম মোল্লা নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় তার ফুফাতো ভাই রাকিব মোল্লা। বর্তমানে সে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সে ওই এলাকার খালেক মোল্লার ছেলে।

মঙ্গলবার দুপুরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিয়ামের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে গৌরনদী থানার পুলিশ। পরে সন্ধ্যায় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে আজ বেলা তিনটার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। সিয়ামের চাচা আলতাফ হোসেন মোল্লা ও অন্য স্বজনেরা তার লাশ গ্রহণ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে গ্রামের বাড়ি উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়নের বাহেরঘাট গ্রামে নিয়ে যান।

নিহত সিয়ামের খালাতো ভাই আশিকুর রহমান দুপুরে লাশ নিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মারা গেছে এতে যতটা না কষ্ট পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি তাদের দুজনকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দেওয়ায়। দয়া করে এ বিষয়টি আপনারা গণমাধ্যমে তুলে ধরুন। তারা শিশু-কিশোর, মাদকাসক্ত ছিল না।’

সিয়ামের মৃত্যুতে পুরো পরিবার শোকে বিহ্বল। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে তার মা জোছনা বেগম ঢাকা থেকে গতকাল সকালে বাড়িতে এসেছেন। তিনি কোনো কথাই বলছেন না। মুখে কোনো খাবার তুলছেন না। কথা বলতে চাইলে সিয়ামের বাবা রিপন মোল্লা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা কী করবেন? আমার পোলারে ফিরাইয়্যা দেতে পারবেন? লেইখ্যা কী অইবে, আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম।’

মাদকবিরোধী অভিযানে গুলির ঘটনায় গতকাল রাতে আগৈলঝাড়া থানায় দুটি মামলা হয়েছে। র‍্যাব-৮-এর পক্ষে জ্যেষ্ঠ ওয়ারেন্ট অফিসার শেখ রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। মামলায় আহত রাকিব মোল্লাকে আসামি করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিবকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে পুলিশ আদালতে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউল ইসলাম।

নিহত সিয়াম ও আহত রাকিবকে ‘মাদক বিক্রেতা’ উল্লেখ করা হলেও আগৈলঝাড়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে আগে কখনো মাদকসংক্রান্ত মামলার তথ্য নেই। ওসি অলিউল ইসলাম বলেন, ‘নিহত সিয়াম ও আহত রাকিবের বিরুদ্ধে আমাদের থানায় এ–সংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। অন্য থানায়ও মামলার তথ্য আমরা পাইনি। হতে পারে আগে তারা আটক হলেও শিশু হিসেবে মামলা হয়নি।’

ঘটনাটি মর্মান্তিক ও অনভিপ্রেত মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে তাঁরা সব সময় সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দুর্ভাগ্যজনক। কিশোরদের ওপর এমন নির্মমতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর বয়স বাড়িয়ে দেওয়ায় ঘটনাটিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি সুরক্ষায় এ ঘটনার নিবিড় তদন্ত হওয়া উচিত।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন