প্রতিনিধি পাবনা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ধাওয়া দিচ্ছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। সোমবার দুপুরের চিত্র | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পাবনার ঈশ্বরদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আঁকা দেয়ালচিত্র (গ্রাফিতি) মুছে ফেলা এবং এক শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত দুই শিক্ষার্থী।

আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল। ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে পুলিশ দুপক্ষকে সরিয়ে দেয়।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, উপজেলার গোকুলনগর এলাকার মাহাবুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান জিহাদ ও স্কুলপাড়া এলাকার সাইদুজ্জামানের ছেলে তানজিদুর দিহান। বর্তমানে তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

ঈশ্বরদীর কলেজ রোড এলাকায় ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জানা গেছে, কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’–সম্পর্কিত দেয়ালচিত্র মুছে সেখানে নিজেদের দলীয় স্লোগান লেখা হয়। এর প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজগেটে মানববন্ধনে অংশ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে পাল্টা কর্মসূচি দেয় কলেজ ছাত্রদল। সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে এই কর্মসূচি পালিত হয়। দুই পক্ষ একই সময়ে অবস্থান নিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আহত মেহেদী হাসান জিহাদ বলেন, ‘জুলাইয়ের ইতিহাস মুছে ফেলার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করছিলাম। হঠাৎ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত এক শিক্ষার্থী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

হামলার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম নয়ন। তিনি বলেন, ‘কলেজে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। তারা নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়িয়েছেন, এখন আমাদের দোষ দিচ্ছেন। সেখানে পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি—সবাই উপস্থিত ছিলেন। চাইলে তাঁদের কাছ থেকেও ঘটনা জানতে পারেন।’

রফিকুল আরও বলেন, ‘ঈশ্বরদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছেলেরা খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছে।’

ঈশ্বরদী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় সকাল থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ’

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, ‘মানববন্ধন চলাকালে কোনো ঝামেলার খবর আমরা পাইনি। অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

তবে তিনি জানান, মানববন্ধন শেষে ফেরার পথে কলেজ চত্বরের বাইরে হাতাহাতির একটি ঘটনা ঘটে। তাঁর ভাষায়, ‘ঘটনাটি কলেজের বাইরে ঘটেছে। এখনো পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাবনা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, 'এ বিষয়ে আমি এখনও জানি না। তবে ছাত্রদল বিষয়টি খতিয়ে দেখে সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।'

 আরও পড়ুন

ঈশ্বরদীতে গ্রাফিতি মুছে ফেলার অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

বিস্তারিত পড়ুন