[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ঈদ আসছে, ‘আওয়াজ’ বাড়ছে কামারপাড়ায়

প্রকাশঃ
অ+ অ-

কোরবানির ঈদকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে কামারপাড়ায়  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসছে ঈদুল আজহা, আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কামারপাড়ায় ব্যস্ততা দিন দিন বেড়েই চলছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, লোহা পেটানোর টুংটাং আওয়াজ ততই বেড়ে চলেছে কামারপাড়ায়। টকটকে লাল লোহাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রূপ দেওয়া হচ্ছে ছুরি, চাপাতি, বটির মতো যন্ত্রের। যা দিন দুয়েকের মধ্যেই মানুষের অত্যাবশকীয় পণ্যে পরিণত হয়ে যাবে।

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমা নিয়ে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে থাকে এই ঈদ। আর এই পশু কোরবানি দেওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যাবশকীয় হয়ে ওঠে ছুরি, চাপাতি, বটির মতো যন্ত্রগুলো। তাই ঈদ আসার আগেই মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায় কামারপাড়ায়। কেউবা আসেন নতুন ছুরি-চাপাতি কিনতে, কেউবা আসেন পুরনোগুলোই ঠিকঠাক করতে। ক্রেতাদের এই আনাগোনা ও কামারদের লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দ যেন আওয়াজ দিচ্ছে আসন্ন ঈদেরই।

লোহা গলিয়ে বিভিন্ন রকম ছুরি-চাপাতি তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকার কামারের দোকানগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্যস্ততায় সময় পার করছেন তারা। কখনও ব্যস্ত হচ্ছেন ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে, কখনোবা ব্যস্ত লোহা পেটাতে। এভাবেই চলছে তাদের সকাল থেকে রাত।

কামারপাড়া ঘুরে দেখা যায়, আকার ও মান অনুযায়ী ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ছোট ছুরি১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা ও বড় ছুরি ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন কামাররা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মান ভেদে জবাই করার ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি ছুরি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি। আর স'মিলের করাত দিয়ে বানানো প্রতিটি ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়।

এদিকে ছুরি পিস হিসেবে বিক্রি হলেও চাপাতি বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। ওজন ও মান অনুযায়ী চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি চাপাতি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে। আর স্প্রিং দিয়ে তৈরি চাপাতি পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে।

আকার ও মান ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হচ্ছে ছুরি-কাচিসহ নানান যন্ত্রপাতি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

একইভাবে বটিও ওজন ও মান অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। স্প্রিংয়ে তৈরি বটি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজিতে। আর রেলপাতি (রেলে ব্যবহৃত লোহা) দিয়ে তৈরি বটি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে।

ছুরি, চাপাতি, বটি বিক্রির দোকানগুলোতে এসব যন্ত্র ছাড়াও কুড়াল, কোদাল, শাবল, কাঁচিসহ বিভিন্ন লোহার তৈরি যন্ত্রপাতিবিক্রি হয়ে থাকে। তবে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের আগে কোন কোন যন্ত্রপাতির বিক্রি বেশি হয় এমনটা জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. নুরুন নবী বলেন, সারা বছর আমাদের এসব দোকানে প্রায় সব ধরনের যন্ত্রপাতিই বিক্রি হয়ে থাকে। তবে কোরবানির ঈদের আগে আমাদের এখানে ছোট ছুরি, জবাই ছুরি আর চাপাতিই বেশি বিক্রি হয়।

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ব্যস্ততা ও বিক্রি ততই বাড়ছে বলে জানান কামাররা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আসন্ন ঈদের বেচাকেনা নিয়ে এসময় কথা হয় ছুরি-চাপাতির বিক্রেতা মো. জিহাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, অল্প পরিমাণে হলেও ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়েছে প্রায় ৮-১০ দিন হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেচাকেনা হচ্ছে। ঈদ যত কাছাকাছি চলে আসবে তখন বিক্রি আরও বেড়ে যাবে। তখন প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে।

আরেক বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম মনির বলেন, অনেকের ঈদের বেচাবিক্রি আগেই শুরু হয়েছে। তবে আমার বেচাবিক্রি শুরুহয়েছে ৩-৪ দিন ধরে। যা বিক্রি হচ্ছে তাতে আমার চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে।
অনলাইন ব্যবসার কারণে কামারদের দোকানে ভিড় কিছুটা কম বলেও জানান অনেকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনলাইন ব্যবসার কারণে আমাদের বিক্রি কমে যাচ্ছে। আবার আমাদের লসও হচ্ছে।মানুষ এখন অনলাইনে কেনাকাটা করে। আর আমাদের থেকে মাল কিনে নিয়ে অনলাইনওয়ালারা বেশি দামে বিক্রি করছে।এটাতে আমরা লসে পড়ে যাচ্ছি।

ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে কাওরান বাজারের কামারপাড়ায় প্রয়োজনীয় যন্ত্র কিনতে এসেছিলেন মো. সিরাজুল ইসলাম জাকারিয়া। তিনি বলেন, এখন ছুরি চাপাতির দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে ৫০০ টাকা নিয়ে কিনতে আসলে ছুরি, চাপাতি, বটি কিনে নিয়ে যেতে পারতাম। আর আজ শুধু একটা চাপাতিই কিনলাম ৭০০ টাকা দিয়ে। তবে এটাও সত্য যে আগের থেকে এখন মান ভালো হয়েছে। 

দিনে ৩০-৪০ হাজার টাকার ছুরি-চাপাতিও বিক্রি করছেন অনেক কামার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আরেক ক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, এরা (বিক্রেতা) ইচ্ছেমতো দাম চায়। একটা ছোট ছুরির দাম চেয়েছে ৩০০ টাকা। পরে আমি ৩৫০ টাকা দিয়ে দুইটা কিনেছি। ঈদের সময় বলে যার কাছ থেকে যা দাম নেওয়া যায় এই টেনডেন্সিতে তারা চলছে। নতুন কেউ এখানে কিনতে আসলে ইচ্ছামতো টাকা রেখে দেবে তারা।

এদিকে কামারের দোকানে যে কেবল ক্রেতারা নতুন যন্ত্র কিনতে আসছে এমনটা না। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে লোহার ছুরি-চাপাতি-বটির উপর মরিচা পরে যায় কিংবা ধারালো ভাবও কমে যায়। তাই অনেকেই এখানে আসছেন তাদের পুরনো ছুরিচাপাতি নিয়ে নতুন করে ধার করাতে।

পুরনো দা-ছুড়ি ধার করাতে গেলেও এখন বেশি টাকা লাগছে বলে অভিযোগ কারও কারও | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মো. সেলিম নামের এক ক্রেতা এসেছিলেন পুরনো যন্ত্র ধার করাতে। তিনি বলেন, আমি পাঁচ বছর আগে চাপাতি কিনেছিলাম। এগুলো তো আসলে সবসময় ব্যবহার হয় না, ধরতে গেলে বছরে একদিনই ব্যবহার করা হয়। তাই জং পড়ে যায়। তাই আমি দুইটা বটি আর একটা চাপাতি নিয়ে এসেছি ধার করাতে। এই তিনটা জিনিস ধার করাতে ওরা নিচ্ছে ৪০০ টাকা।

আমজাদ হোসেন নামের আরেক ক্রেতা, তিনিও এসেছিলেন পুরনো চাপাতি ধার করাতে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখন ধার করানোর জন্য বেশি টাকা নিচ্ছে। আগে ১০০ টাকা হলে একটা চাপাতি ধার করানো যেতো কিন্তু এখন লাগে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মতো। কিছু বললেই বলে সবকিছুর নাকি দাম বেড়েছে, তাই তাদের রেটও নাকি বেড়ে গিয়েছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন