কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কাগজে সই করছে: নাহিদ ইসলাম

এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম | ছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তারা কেবল একটি কাগজে সই করছে, কিন্তু বাস্তবে গণমানুষের স্বার্থের কথা ভাবছে না।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অনেক কমিশন হয়েছে—যেমন শ্রম কমিশন, স্বাস্থ্য কমিশন। কিন্তু এসব নিয়ে কোনো বাস্তব আলোচনা হয়নি। মানুষের জীবন ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারও চোখে পড়েনি। এখন শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেখানেও গণতন্ত্রের জন্য সবার ভালো ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, তাই তারা মনে করছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লড়াইয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক রূপান্তরের লড়াইও প্রয়োজন। যেটিকে তারা ‘বৈষম্যবিরোধী, ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখছেন। এই লড়াইয়ে ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী সবাই একত্রিত হয়ে অংশ নেবেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সব উন্নয়নের কেন্দ্রে মানবিক মর্যাদা থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশে যে উন্নয়নের গল্প শোনানো হয়েছে, সেই কাঠামো থেকে দেশকে বের করতে হবে। উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন, কর্মসংস্থান ও শ্রমিকের ন্যায্য অংশ। এই মর্যাদা ও দায়-দরদে ভরা সমাজই তাদের লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় শ্রমিক শক্তি আজ আত্মপ্রকাশ করছে এবং রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছে। অন্যদিকে, একই দিনে কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা জানি, রাজপথের শক্তিই জয়ী হয়। ইনশা আল্লাহ, জাতীয় শ্রমিক শক্তিও জয়ী হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি শ্রমিকদের পক্ষে রাজনীতি করবে এবং শ্রমিক অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করবে।' 

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে এখনও শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির জন্য লড়াই করছেন। গার্মেন্টস, কলকারখানা ও বস্তিতে আগুন লেগে মানুষ মারা যাচ্ছে, অথচ জীবনের মূল্য মাত্র দুই-তিন লাখ টাকায় নির্ধারণ করা হচ্ছে। শ্রমিকের শ্রমকে কেবল অর্থনৈতিক শোষণের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে চলবে না। গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মাধ্যমে এই দুর্নীতিগ্রস্ত ও লুটপাটের ব্যবস্থা বদলানো জরুরি।

নাহিদ ইসলাম ফ্যাসিবাদী আমলে রাঘব ও মাফিয়া অলিগার্কদের বিচার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই মাফিয়াদের ব্যবসা এখনও রক্ষা করা হচ্ছে সরকারের ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। তাই তারা এই অলিগার্কি ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চান।

অনুষ্ঠানে নতুন সংগঠনের নেতাদের নামও ঘোষণা করা হয়। নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় শ্রমিক শক্তির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাজহারুল ইসলাম ফকির। সদস্যসচিব হচ্ছেন শ্রমিক নেতা রিয়াজ মোর্শেদ এবং মুখ্য সংগঠক শ্রমিক নেতা আরমান হোসেন।