নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের আবহ কি ফেরাবে ডাকসুতে ছাত্রদল?
ডাকসু নির্বাচনের প্রচার শুরুর আগে ২৬ অগাস্ট একাত্তরের শহীদদের স্মৃতি ফলক ‘স্মৃতি চিরন্তনে’ নিজেদের প্যানেলের লিফলেট হাতে ছাত্রদলের প্রার্থী ও অনুসারী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তখন তুঙ্গে, সেই সময় ১৯৯০ সালের জুনে আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয় পেয়েছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
এবার জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আসা ডাকসু নির্বাচনেও নব্বইয়ের মতো ‘গণজোয়ারের’ আশা করছে ছাত্রদল। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তরুণদের বেছে নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সাংগঠনিক অবস্থা বিবেচনায় নব্বইয়ের সেই স্মৃতি ফেরাতে পারবে কি-না, এখন সেটা দেখার অপেক্ষা।
যেসব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল ছাত্রদল, নতুন বাস্তবতায় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আন্দোলনের সেই সহযাত্রীরাই।
ওই আন্দোলনের পর ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান সংহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে উধ্বর্তন নেতৃত্বকে বাদ রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে প্রার্থী করেছে। এমন মুখ আনা হয়েছে, যারা জুলাই আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয় ভূমিকায়।
ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জিএস পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার নতুন কমিটির আহ্বায়ক এবং এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ বিজয় একাত্তর হল শাখার আহ্বায়ক।
ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আবিদ বর্তমানে এমফিলে পড়ছেন। আর হামীম উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ এবং মায়েদ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে নির্বাচিত ভিপি আমান উল্লাহ আমান বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নির্বাচিত জিএস খায়রুল কবীর খোকন দলের যুগ্ম মহাসচিব আর এজিএস পদে জয়ী নাজিমউদ্দিন আলম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
তখনকার স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং এবার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের ভূমিকার প্রেক্ষাপট মিলিয়ে ডাকসু ভোটের ফলাফলে বিএনপির ছাত্র সংগঠনটির ভালো করার সম্ভাবনা দেখছেন সাবেক এজিএস নাজিমউদ্দিন আলম। তিনি বলেন, 'নব্বইয়ে যে গণজোয়ার ছিল, সেটা এখন দেখতে পাচ্ছি, তার কারণ হল- আমাদের ভিপি প্রার্থী আবিদ, জিএস প্রার্থী হামীম এবং এজিএস প্রার্থী মায়েদ-এরা এই গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে খুব আপসহীনভাবে, সাহসিকতার সাথে রাজপথে লড়াই করেছে।আজকে বিশেষ করে যে ভিপি প্রার্থী সে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে এবং সে আপনার, আহত হয়েছে বিভিন্নভাবে, তার উপরে অনেক জুলুম-অত্যাচার হয়েছে। তারপরও সে থেমে থাকে নাই, সে লড়াই করেছে।'
এই বিএনপি নেতা বলেন, এবারের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ’ বিরোধী আন্দোলনে তাদের সবার সক্রিয় ও ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। সকল ছাত্র সংগঠন, সবাই যারা যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছিল সকলেরই অবদান ছিল। তো আমরা সবচেয়ে বড় সংগঠন হিসেবে আমাদের সবচেয়ে অংশগ্রহণ বেশি ছিল।'
![]() |
ভোটের প্রচারে ছাত্রদলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নব্বইয়ে ছাত্রদলের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ছাত্রলীগ ও তাদের সঙ্গে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে থাকা সংগঠনগুলোও নেই ভোটের মাঠে।
এবার ছাত্রদলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে নব্বইয়ে পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইসলামী ছাত্রশিবির। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে যে দুই সংগঠনের অবস্থান ছিল একই জায়গায়।
বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর তিনটি প্যানেলের পাশাপাশি এবার ভোটের মাঠে আছে জুলাই আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)।
আর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একটি অংশ নিয়ে গড়েছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’।
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার হটিয়ে দেওয়ার পর তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও নিষিদ্ধ। ফলে প্রায় দেড় দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতির অবাধ সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে হলগুলোতে ছাত্রদল কমিটি দেওয়ার পর বিরোধিতার মুখে পড়ে, যার ধারাবাহিকতায় হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অভ্যুত্থানের আগে ক্যাম্পাস ও হলকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ছাত্রদল থাকতে পারেনি ছাত্রলীগের দাপটে, বাইরের রাজনীতিতেই ছিলেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া পড়ালেখা শেষ হয়ে যাওয়ায় হল ছাড়তে হয়েছে নেতাকর্মীদের অনেককে।
এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় প্যানেল ঘোষণায় বয়ঃজ্যেষ্ঠদের বাদ দিয়ে নতুনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এনে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে ছাত্রদল।
তবে, ছাত্রদল ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে আগের মতো ‘গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি’ ফিরবে কি-না, সেই শঙ্কা রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
![]() |
ভোটের প্রচারে ছাত্রদলের জিএস পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কীভাবে নব্বইয়ের সেই স্মৃতি পুনরাবৃত্তি করতে চায় ছাত্রদল, এমন প্রশ্নে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম বলেন, 'নব্বইয়ে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনটি সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক, সুস্থ-সুন্দর ও সবচেয়ে ভালো নির্বাচন ছিল। সেখানে ছাত্রদল পূর্ণ প্যানেলে ভূমিধস বিজয় লাভ করেছে। ঠিক ৯০ এর মত আমরা এবারও সুস্থ্- সুন্দর ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন চেয়েছি। যেখানে ছাত্রদল আগের মতো নিরঙ্কুশ জয় লাভ করবে।'
ভোটের মাঠে ‘খুবই ভালো অবস্থা’ দেখার দাবি করে তিনি বলেন, 'বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমরা আশাবাদী যে ৯০ এর মতো একদম পূর্ণ প্যানেলে জিতে আসব।'
এবার নব্বইয়ের ডাকসু নয়, ছাত্রদল তার চেয়ে ভালো অবস্থানে যাবে বলে মনে করছেন ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, 'আমি তো ৯০ এর পুনরাবৃত্তি চাইনি। আমি মনে করি, ৯০ এর চেয়ে এবার ২৪ এর পুনরাবৃত্তি হবে।'
ভোটের মাঠে সাড়ার বিষয়ে আবিদু ইসলাম বলেন, ‘এবার আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। এখন হয়ত অনলাইনে সাড়া কম। কিন্তু মাঠে শিক্ষার্থীদের থেকে সাড়া পাচ্ছি।'
যা বলছেন শিক্ষার্থীরা
‘নিয়মিত শিক্ষার্থীদের’ নিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল দেওয়াকে ‘ইতিবাচক পরিবর্তন’ হিসেবে দেখছেন কোনো কোনো শিক্ষার্থী।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম বলেন, 'ছাত্রদল বললে আগে সবাই ‘চাচ্চুদল’ বলত। এখন তাতে পরিবর্তন হয়েছে, আমাদের সময়ের লোকজনকে (মনোনয়ন) দিছে। এটা আমি মনে করি, ছাত্রদলের একটা বড় পরিবর্তন। তারা যদি শিক্ষার্থীদের মনোভাব বুঝে কাজ করতে পারে ভালো করবে।'
ছাত্রদলের হাত ধরে হলগুলোতে আবার গণরুম-গেস্টরুম ফেরার কোনো শঙ্কা দেখছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ছাত্রদল এখন যে ইতিবাচকতা দেখাচ্ছে, তাতে আমার মনে হয় না ফিরবে। তবে তারা যদি সেই আগের মতো ‘মার-মার’ অবস্থায় ফিরে যায়, তাহলে তাদের হাত ধরেই ফিরবে।'
![]() |
এমনই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর গণরুম | ফাইল ছবি |
শাহরিয়ারের সঙ্গে প্রায় একমত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুদাসসির রহমান।
তার ভাষ্য, 'ছাত্রদল যেভাবে কাজ করছে তা ইতিবাচক। তবে তাদের নেতাদের মধ্যে এখনো কিছুটা নিজেদের ‘বিশেষ’ কিছু মনে করার প্রবণতা আছে। সেটা যদি পরিহার করতে পারে, ভালো করবে বলে মনে করি।'
মুদাসসির মনে করেন, সামনের দিনে যদি এরকম ‘ইতিবাচক মেজাজ’ ধরে রাখতে পারে, তাহলে ছাত্রদলের রাজনীতি ‘শিক্ষার্থীবান্ধব’ হবে।
তার ভাষ্য, 'ছাত্রদলকে গত এক বছর ইতিবাচক দেখেছি। এখন কথা হচ্ছে, এটি ধরে রাখতে পারে কিনা? যদি রাখতে পারে, তাহলে ক্যাম্পাসে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়বে। আর না পারলে, তারাই ত্রাসের রাজত্ব করবে। তখন গণরুম-গেস্টরুম এসব তো সাধারণ ব্যাপার।'
১৯৯০ সালের ভোট
এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্যে ১৯৯০ সালের ৬ জুন অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ২০টি পদের সবগুলোতে এবং ৯টি হলে পূর্ণ প্যানেলে জয় পায় ছাত্রদল।
ওই নির্বাচনে মোট ২৮ হাজার ২৩০ ভোটারে মধ্যে ১৭ হাজার ৯৩৮ জন ভোট দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ডাকসুতে ভিপি পদে আমান উল্লাহ আমান ৭ হাজার ৩৮৯ ভোট, জিএস পদে খায়রুল কবরি খোকন ৭ হাজার ১৯১ ভোট এবং এজিএস পদে নাজিমউদ্দিন আলম ৭ হাজার ৮১ ভোট পেয়েছিলেন।
![]() |
১৯৯০ এর ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হয় ছাত্রদলের আমান-খোকন-আলম প্যানেল | ফাইল ছবি |
ওই নির্বাচনে প্রায় ৩০টি প্যানেল অংশ নেওয়ার খবর দিয়েছিল সেই সময়ের বিভিন্ন পত্রিকা। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগ দ্বিতীয় এবং ৯ ছাত্র সংগঠনের জোট তৃতীয় অবস্থানে ছিল।
ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী শাহে আলম ৩ হাজার ৬১৯ ভোট ও জিএস প্রার্থী সৈয়দ কামরুল আহসান ৩ হাজার ৪১৮ ভোট, ৯ সংগঠনের ভিপি প্রার্থী মুশতাক হোসেন ২ হাজার ৬১২ ভোট ও জিএস প্রার্থী জহিরুদ্দিন স্বপন ২ হাজার ৭৫২ ভোট, ছাত্র ইউনিয়নের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ১ হাজার ৭১ ভোট ও জিএস প্রার্থী নাসির উদ দুজা ২ হাজার ৩০ ভোট, ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ১ হাজার ১৪৯ ভোট এবং জিএস প্রার্থী মুজিবুর রহমান ১ হাজার ৮৪ ভোট পেয়েছিলেন।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ৯ ছাত্র সংগঠনের প্যানেলের প্রার্থী মুশতাক হোসেন ১৯৮৯ সালের ডাকসুতে জিএস এবং ছাত্র ইউনিয়নের জিএস প্রার্থী নাসির উদ দুজা ওই সংসদে এজিএস ছিলেন।
ছাত্রদলের সাবেক একজন ছাত্র নেতা জানিয়েছিলেন, অন্তঃকোন্দলের জেরে ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনের ঠিক আগে ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি করে দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সেই প্রেক্ষাপটে সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু ও সদ্য ভেঙে দেওয়া কমিটির আসাদুজ্জামান রিপনের নেতৃত্বে ছাত্রদলের একটি বিদ্রোহী প্যানেল ভোটের মাঠে নেমেছিল। শেষের দিকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। এর পরও ভিপি প্রার্থী দুদু ৫০ ভোট এবং জিএস প্রার্থী রিপন ১০৭ ভোট পেয়েছিলেন।
ডাকসু: ১৯৯০ বনাম ২০২৫
১৯৯০ এবং ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদলের অবস্থানের মিল-অমিল কোথায়, তা বর্তমান নেতৃত্ব ও সাবেক এজিএস নাজিমউদ্দিন আলমের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে প্রতিবেদক।
নাজিমউদ্দিন আলম বলেন, 'আমাদের নির্বাচনটা অভ্যুত্থানের আগে হয়েছে। আর এটা হল অভ্যুত্থানের পরে। দুইটা দুই জিনিস কিন্তু। ১৯৯০ সালের ৬ জুন আমাদের নির্বাচনটা হল, আর তার প্রায় ছয় মাস পর ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হল।'
১৯৯০ সালেও ‘বেশ ভালো প্রতিযোগিতা’ থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'সকল ছাত্র সংগঠনের একটা সহাবস্থান ছিল। এবং পরিবেশ পরিষদ ছিল। সকল ছাত্র সংগঠনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে ঝুঁকি নিয়ে হলেও নির্বাচনটা করেছে। ১৯৮৯ সালে হয়েছে, ৯০ সালে-দুটো নির্বাচন পরপর হয়েছে।'
এবার একেবারে নতুন নেতৃত্ব আনলেও সেসময় সংগঠনের পদধারীদের প্রার্থী করার কথা তুলে ধরে ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বলেন, 'আমাদের সময়ে সাংগঠনিক লোকদের দেওয়া হয়েছিল। এখনকার পরিবেশ একটু ভিন্ন। এখন একদম ফ্রেশ স্টুডেন্ট যারা তারা আসছে। মাস্টার্স শেষ করে আমরা আবার স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের জন্য আরেকটা ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব ধরে রেখে আন্দোলন চালিয়েছিলাম। আমরা আরেকটু সিনিয়র ছিলাম। এরা এখন নির্বাচন করতেছে, একেবারেই তরুণ ও উদ্যমী, এটা তাদেরকে দেখলে বুঝতে পারি।'
![]() |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন | ফাইল ছবি |
নব্বইযের ডাকসু নির্বাচনের সময় আমান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক এবং নাজিমউদ্দিন আলম যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। আর খায়রুল কবীর খোকন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব এবং সেই আন্দোলনে ছাত্রদলের ভূমিকা তুলে ধরে প্রচার চালানোর কথা বলেছেন নাজিমউদ্দিন আলম।
তিনি বলেন, 'বর্তমানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন। ছাত্রদলের গৌরবোজ্জল ইতিহাস রয়েছে। বিশেষ করে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সফলতা ছিল। সে ধারাবাহিকতায় ওই সময় ছাত্রদল শুধু ডাকসু না, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ইউকসু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-চাকসু, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সাফল্য ছিল। আশা করি, যাতে নিরপেক্ষভাবে, ছাত্রদের চাহিদা অনুযায়ী, তারা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে, তাদের ভোটের অধিকারের জন্য ১৭টি বছর আমরা আন্দোলন করেছি। আর ডাকসু মিনি পার্লামেন্ট। সুতরাং এখানে যেন ছাত্র-ছাত্রীর সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে।'
ডাকসুতে ১২টি সম্পাদকীয় পদে ছাত্রদল প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে আরিফুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল ইসলাম, কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আবু হায়াত মো. জুলফিকার জিসান, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক চিম চিম্যা চাকমা, ছাত্র পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক মো. সাইফ উল্লাহ্ (সাইফ), সমাজসেবা সম্পাদক সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক, ক্যারিয়ার উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. আরকানুল ইসলাম রূপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসাইন এবং মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান মুন্না।
জুলাই আন্দোলনে আহত সানজিদা আহমেদ তন্বীর ‘সম্মানে’ গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক পদটি খালি রাখার কথা বলেছে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের প্যানেলে মো. জারিফ রহমান, মাহমুদুল হাসান, নাহিদ হাসান, মো. হাসিবুর রহমান সাকিব, মো. শামীম রানা, ইয়াসিন আরাফাত আলিফ, মুনইম হাসান অরূপ, রঞ্জন রায়, সোয়াইব ইসলাম ওমি, মেহেরুন্নেসা কেয়া, ইবনু আহমেদ, সামসুল হক আনান ও নিত্যানন্দ পাল ডাকসুর সদস্য পদে প্রার্থী করা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন