{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে মারধর, শিক্ষার্থী-গ্রামবাসী সংঘর্ষ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

এক ছাত্রীকে মারধরের ঘটনাকে ঘিরে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মুখোমুখি অবস্থানে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন জোবরা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের প্রায় দেড় মাস আগে ক্যাম্পাসে বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে গতকাল রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের প্রায় ২০০ জনই শিক্ষার্থী।

ভাড়া বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন, এমন খবরে সংঘর্ষের শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকেরা দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মুহূর্তেই দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।

দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল লোহার রড, পাইপ, কাঠের গুঁড়ি, পাথর। গ্রামবাসীর হাতে ছিল রামদা, লোহার রড, পাইপ। সংঘর্ষে জোবরা গ্রাম রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে। সংঘর্ষ একপর্যায়ে গ্রামের অলিগলি ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাঁদের মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে।

ইটের আঘাতে সহ-উপাচার্য কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দারসহ কয়েকজন শিক্ষক গতকাল আহত হয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

গতকাল সংঘর্ষ শুরু হয় দুপুর ১২টায়। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। ৩টা ২৩ মিনিটে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের সদস্যরা জোবরা গ্রামে প্রবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা গাড়ি ঘিরে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা গতকাল সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কেউ ক্যাম্পাসে আসেননি। এ কারণে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এ ঘটনায় গত শনিবার রাত থেকে গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটে প্রায় ২৭ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থী পড়ছেন। সংঘর্ষের পর গতকাল সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ক্লাসও তেমন হয়নি।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটের কাছে একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি ওই ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে ভবনের দারোয়ান তাঁকে মারধর করেন। এ সময় ২ নম্বর গেটে থাকা শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা তাঁকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন ইটপাটকেল মারা শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সময়মতো বাসায় আসি। আজকেও দেরি করিনি। ১২টার মধ্যে চলে আসি। দারোয়ানকে দরজা খুলতে বললে তিনি খুলছিলেন না। পরে জোরে ডাক দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। আমি জবাব দিতে গেলে হঠাৎ চড় মারেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার রুমমেটরা নামলে তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং লাথি মারতে থাকেন। এ সময় রুমমেট ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন।’

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট-সংলগ্ন জোবরা গ্রামে গিয়ে জড়ো হন। এলাকাবাসীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়।

শনিবার দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে দুই পক্ষ সরে যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। রাতেই অন্তত ৭০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। রাতের ঘটনার পর ২ নম্বর গেট থেকে জোবরা হয়ে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন স্থানীয় লোকজন।

বিশ্ববিদ্যালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দোষারোপ

গতকাল সকাল নয়টায় জোবরা গ্রামে গেলে স্থানীয় লোকজন এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রায় ১ কিলোমিটার ঘুরে অন্তত ৫০ জন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দোষারোপ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. লোকমান বলেন, ওই ছাত্রী দেরিতে বাসায় ঢুকতে চেয়েছিলেন বলে তিনি শুনেছেন। এ নিয়ে দারোয়ানের সঙ্গে বাদানুবাদ হয়। ওই ছাত্রী অন্য শিক্ষার্থীদের ডেকে আনলে ঘটনাটি সংঘর্ষে রূপ নেয়। তুচ্ছ এ ঘটনা সহজেই সমাধান করা যেত। তবে ছাত্রীর গায়ে হাত তোলা কোনোভাবেই উচিত হয়নি।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, শনিবার রাতের হামলায় ভাঙচুর করা হয় অন্তত ১০টি ঘরের জানালা, দোকানের দরজা, একটি নোহা গাড়ি ও তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড হলো জোবরা গ্রাম। ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিউল আলম দাবি করেন, ওই ছাত্রী তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে দারোয়ানকে থাপ্পড় দেন। অন্য শিক্ষার্থীকে ডেকে এনে মারধর করেন। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা গতকালও বাড়িঘরে হামলা করেছেন। একটি ঘরে আগুন দিয়েছেন।

গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়া জোবরা গ্রামে গিয়ে বলেন, ‘উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা রাতে আমাদের ঘরবাড়ি, মা-বোন ও গাড়ির ওপর হামলা চালিয়েছে। এই ছাত্ররা ভিসিকেও মানে না।’ তিনি হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি ২ নম্বর গেটের সড়ক বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।

তাঁর বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পরে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করে বিএনপি। বিকেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, স্থানীয়রা অন্তত ২০০ শিক্ষার্থীকে আহত করেছেন। কুপিয়ে জখম করেছেন। মাথা ফাটিয়েছেন। কোনো এলাকাবাসীকে ধরে পেটানো হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীকে অলিগলি থেকে বের করে পেটানো হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মারধরের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কোনো লুটপাট করা হয়নি।

আরেক শিক্ষার্থী মাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। বিপরীতে শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া জানান।

চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে যা দেখা গেল

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন আহতরা। কারও মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। কারও হাতে কোপের দাগ। চিকিৎসাকেন্দ্রে শয্যাসংকটে হিমশিম অবস্থা শিক্ষার্থীদের। কিছুক্ষণ পরপর হাসপাতালে ঢুকছিলেন আহত শিক্ষার্থীরা।

চিকিৎসা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, এখানে গুরুতর অবস্থায় ২০০ ছাত্র এসেছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই গুরুতর আহত। কারও শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। কারও মাথা ফেটেছে ইটের আঘাতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসে ও অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরের কয়েকটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাকেন্দ্রে অক্সিজেনসহ সবকিছুর ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। প্রশাসন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং আশপাশের শিক্ষার্থীরা সাহায্য করছেন। তবু পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত অন্তত ৭৭ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন। বেশির ভাগ মাথা, হাত ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সমাজতত্ত্ব বিভাগের মো. মামুন নামের একজনকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, আহতদের অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। যাঁরা ভর্তি আছেন, তাঁদের চিকিৎসায় যাতে কমতি না হয়, সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এলাকা ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৩টি আবাসিক হল রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদের ৯টি ও ছাত্রীদের ৪টি হল। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী হলে থাকার সুযোগ পান। আরও অন্তত ৫ হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজে ও মেসে ভাড়া থাকেন।

২ নম্বর গেট-সংলগ্ন জোবরা গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী। গতকাল সংঘর্ষের পর এলাকা ছাড়েন অনেকেই। তাঁদের একজন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি বলেন, জোবরা গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। এখন নিরাপত্তাহীনতায় এলাকা ছাড়তে হলো। কোথায় যাবেন, তা জানেন না। এলাকাছাড়া আরও ৫ শিক্ষার্থী বলেন, হঠাৎ তাঁদের বাসা ছাড়তে হয়েছে। এতে বিপদে পড়েছেন।

ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

গতকাল সকালে ক্যাম্পাসের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় যাঁরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত, তাঁদের শাস্তি দাবি করেন নেতা-কর্মীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যান। তাঁরা বিচারের আশ্বাস দেন।

উপাচার্য বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। উচ্চপর্যায় থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল পুলিশ মোতায়েনের জন্য। আমরা করিনি। আমরা বলেছি, আমাদের ছাত্ররাই যথেষ্ট। আমরা তো পুলিশও রাখতে চাই না, ছাত্ররা যদি ঠিক থাকে। ছাত্রদের মধ্যে ঐক্য নেই। ছাত্রদের ভেতর বিভেদ, ফাটল, টিচারদের ভেতরে দলীয় রাজনীতি। নানা সমস্যা রয়েছে। আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে কি না, সেটা পরীক্ষা করার দরকার।’

সহ-উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের নিরীহ শিক্ষার্থীরা এলাকার সন্ত্রাসীদের দ্বারা আহত হয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীর পাশে রয়েছে। পুলিশ প্রশাসন থেকে যে পরিমাণ সহায়তা পাওয়ার কথা, সেটি পাইনি। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত পুলিশ থাকত, সব জায়গায় পুলিশের পাহারা থাকত, জলকামান থাকত, বিশ্ববিদ্যালয় বলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আসত। কিন্তু এখন পুলিশ বলে, সরি, তারা আসতে পারবে না।’

সহ-উপাচার্য জানান, শনিবার রাতের সংঘর্ষের সময় স্থানীয় লোকজন পুলিশের তিনটি গাড়ি, প্রক্টরিয়াল বডির একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, গতকাল সকাল থেকে সাদাপোশাকে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। আগের রাতে পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ কারণে সাদাপোশাকে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।

চাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয়

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়েছে। আজ সোমবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা। তবে এর আগেই এত বড় সংঘাত সৃষ্টি হলো।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তুচ্ছ একটি ঘটনা কোনো একটি পক্ষের ইন্ধনে বড় হয়েছে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এত শিক্ষার্থী আহত হলেন। এখন বর্তমান প্রশাসন চাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারবে কি না, সন্দেহ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, কোনো একটি পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এতে চাকসু নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

৫ বছরে ২৫ বার মারামারি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ প্রায় প্রতিবছরই ঘটে। সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট চাঁদা দাবির ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। দুই শিক্ষার্থী রেলস্টেশন এলাকায় একটি দোকান নির্মাণ করতে গেলে চাঁদা দাবি করলে হাতাহাতি হয়।

সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনের কাছে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামান। এ সময় স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় আসাদের। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন আসাদ। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, স্থানীয় ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, দুর্ব্যবহার, পাহাড়ের গাছ কাটাসহ নানা কারণে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত পাঁচ বছরে অন্তত ২৫ বার ছোটখাটো হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন