রাকসু নির্বাচনে ফরম তুলতে গিয়ে ছাত্রদলের তোপের মুখে সাবেক সমন্বয়ক আম্মার
রাকসুতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্রদলের অবস্থান। আজ রোববার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভের মধ্যে মনোনয়ন ফরম তুলতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার তোপের মুখে পড়েছেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়।
আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ভবনের কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
তফসিল ঘোষণার পর আজ মনোনয়ন ফরম উত্তোলনের শেষ দিন ছিল। সালাউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মনোনয়ন ফরম নিতে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে গেলে তাঁরা দেখেন ফটকে তালা ঝুলছে। এর আগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের দাবিতে সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। সালাউদ্দিন আম্মার ও তাঁর সঙ্গীরা ফটকের সামনে অবস্থান নিলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়ে ধস্তাধস্তিতে রূপ নেয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সালাউদ্দিন আম্মারকে উদ্দেশ করে ‘ফুটেজ খোর’, ‘চাঁদাবাজের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ এবং ‘ভুয়া ভুয়া’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ মাইকে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা না দিয়ে কোনো প্রহসনের নির্বাচন এই ক্যাম্পাসে হতে দেওয়া হবে না। আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এ বিষয়ে সালাউদ্দিন আম্মারও ওই একই মাইকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনে অংশ নেব কি না, তা পরে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমি আমার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে এসেছি। মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেই আমি চলে যাব।’
এদিকে বেলা ১২টার দিকে আরেক সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, মাহায়ের ইসলামসহ শিক্ষার্থীদের একটি দল রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ‘শিক্ষা, সন্ত্রাস, এক সাথে চলে না’ স্লোগান দেন। দুই পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় মাহায়ের ইসলামসহ তিন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিতে দেখা যায়।
তাঁদের রিকশায় তুলে দিচ্ছিলেন সামসাদ জাহান। তিনি নারী বিষয়ক পদে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। তিনি বলেন, ছাত্রদল এখানে এক ধরনের মব সৃষ্টি করেছে। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসেছেন। অতিরিক্ত গরম আর ধস্তাধস্তিতে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান করে স্লোগান দিচ্ছিল।
প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘উভয় পক্ষের দাবিই যৌক্তিক। ছাত্রদল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করছে, আর অন্য পক্ষ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের কথাও বলা হয়েছে। তবে আমি চাই না পুলিশ ক্যাম্পাসে আসুক। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।’
এর আগে আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রথম বর্ষের ভোটাধিকারের দাবি জানান। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ১০টার পর ভেতরে প্রবেশ করতে না দিয়ে কার্যালয়ের বারান্দার একটি চেয়ার ভাঙা হয় এবং একটি বড় টেবিল উল্টে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা ভেতরে থাকা লোকজনকে বের করে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। বেলা ১০টা ৩০ মিনিটে ছাত্রদলের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানান ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিক্ষকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল বেশ কিছুদিন ধরে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে। অন্য দাবিগুলো নির্বাচন কমিশন মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের দাবিতে এর আগেও তারা দুই দিন বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। একই দাবিতে আজ মনোনয়ন ফরম বিতরণের শেষ দিনে ছাত্রদল সকাল থেকে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ২৩টি পদে ও সিনেটের ৫টি পদে ফরম সংগ্রহ করেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন