{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

এক বছরেও স্থির হয়নি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ৯ জুলাই দুপুরে রাস্তায় পড়ে থাকা ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে মাথায় আঘাত করছেন এক ব্যক্তি। কেউ এগিয়ে আসেনি, শুধু তাকিয়ে ছিল পথচারীরা—নির্মমতার এই মুহূর্ত ধরা পড়ে ক্যামেরায় | ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক বছর অতিবাহিত হলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি, মব ভায়োলেন্স, কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে চাঁদা না দেয়ায় নৃশংসভাবে খুন হন ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)। খুনিরা তাকে ডেকে নিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর মৃতদেহের ওপর উল্লাস করা হয়। এই ঘটনায় দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোচনা হয়। যদিও পুলিশ ও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং আরও উন্নতির পথে আছে।

গত বছরের আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীর স্বাভাবিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, গত সরকারের আমলে পুলিশ সরকারের বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া, গত বছরের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়, যার ফলে নারী ও শিশুসহ প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন। অন্তত ৩০ হাজার গুরুতর আহত হন। এই কারণে পুলিশ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য হতাশ হয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন।

৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের কার্যক্রম পুনরায় স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু করে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশি কার্যক্রম চালু হয় এবং ধাপে ধাপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের কার্যক্রম পুনরায় স্বাভাবিক হয়েছে, যদিও এখনও সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে আছে।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সারা দেশে খুনের মামলা হয়েছে ৩৮৩২টি। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৯৩৩টি খুনের মামলা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা দফতরের ফেসবুক পেজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৩৫৫৪টি মামলা হয়েছে। ডাকাতি ও দস্যুতার ২১৩৬টি মামলা, পুলিশ আক্রান্তের ৪৭৯টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। অস্ত্র, বিস্ফোরক, অপহরণ, ধর্ষণ ও দাঙ্গাসহ অন্যান্য অপরাধে মোট মামলা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যা ২৯টি, কারাগারে মৃত্যু ৬১ জনের, সাংবাদিক আক্রান্ত ১৬৫ জন এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ২৩৩ ও আহত ৬১৫৭ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এই সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৮৮ জন, মব ভায়োলেন্সে মারা গেছেন ১০৮ জন।

অন্তর্বর্তী সরকারের পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী এএসএম নাসির উদ্দিন বলেন, 'আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্থিতিশীল না হলেও আগের তুলনায় উন্নতি ঘটেছে। পুলিশ বাহিনী ডিজাস্টারের মতো পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই সেরে উঠেছে। বর্তমানে পুলিশ নেতৃত্ব অনেক দক্ষ।' 

পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'গত বছরের জুলাইয়ে আমরা বড় ধাক্কা খেলাম, পরিস্থিতি এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। তবে এখন ক্রমেই উন্নতি হয়েছে। হাজারেরও বেশি শহীদের মামলা তদন্তের চাপ পুলিশ বহন করছে, তবুও যথাসম্ভব সঠিকভাবে কাজ চলছে। মব ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণে এসেছে।' 

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসেন বলেন, '৫ আগস্টের পর পুলিশ বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে মনোবল ফিরে এসেছে। এখন পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আগের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা অনেক উন্নত হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমরা আরও ভালো কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাব।' 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, 'দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো রয়েছে। সাংবাদিকরা সত্য সংবাদ দিলে পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে। অপরাধী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন