সংবাদদাতা সিরাজগঞ্জ
![]() |
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জমি হারিয়ে ঘরছাড়া হওয়া বৃদ্ধ সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী মতি জাহান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জমি লিখে দেওয়ার পরে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন দুই ছেলে। এমনই ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কুসুম্বী গ্রামে। বৃদ্ধ সানোয়ার হোসেন মণ্ডল (৬৭) ও তাঁর স্ত্রী মতি জাহান (৪৮) এখন আশ্রয় নিয়েছেন পুকুরপাড়ের একটি জরাজীর্ণ ঘরে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জমির দলিল হাতে পাওয়ার পরই সানোয়ার মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেন তাঁদের দুই ছেলে মোক্তার আলী মণ্ডল ও মানিক মণ্ডল। পুকুরপাড়ে একটি টয়লেটের পাশেই টিন ও কাপড় দিয়ে বানানো ছোট একটি ঘরে এখন মানবেতর জীবন কাটছে এই দম্পতির।
তাঁদের দাবি, শুধু ঘর থেকে তাড়িয়েই ক্ষান্ত হননি ছেলে দুইজন ঘরের সামনে সেপটিক ট্যাংক ও টয়লেট নির্মাণ করেছেন, যাতে সেখানে স্বাভাবিকভাবে থাকাও না-সম্ভব হয়।
বৃদ্ধ সানোয়ার হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'ছেলেরা বলল, চিকিৎসার জন্য কিছু কাগজে টিপসই দরকার। আমি না বুঝেই দিয়েছিলাম। পরে অফিসে গিয়েও ওদের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলেছি। পরে বুঝলাম, আমি জমি লিখে দিয়েছি। এরপর আর ঘরে ঢুকতে দেয়নি তারা।'
স্ত্রী মতি জাহান বলেন, 'দুই ছেলেকে নিয়েই তো আমাদের সংসার ছিল। স্বামী সহজ-সরল মানুষ, সেই সরলতার সুযোগেই জমি নিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের খবরও নেয় না কেউ।'
অভিযোগ অস্বীকার করে বড় ছেলে মোক্তার আলী মণ্ডল বলেন, 'বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জমি লিখে দিয়েছেন। আমরা কাউকে তাড়াইনি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।'
এ বিষয়ে কুসুম্বী এলাকার ইউপি সদস্য মো. রাজিব সরকার রাজু বলেন, 'ঘটনাটি সত্যি। ছেলেরা কৌশলে জমি লিখে নিয়েছে। আমি অনেকবার মীমাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা কথা শোনেনি। বাবা-মায়ের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছে।'
তাড়াশ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, 'বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, 'এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'