প্রতিনিধি ফেনী

ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে থানায় গিয়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিএনপি নেতা আলী আকবর | ছবি: পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া

ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুনে থানায় ছুটে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ বাবা। হাতকড়া পরানো ছেলেকে দেখে কথা বলতে ঢোকেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে। সেখানে কথা বলতে বলতে জ্ঞান হারান। দ্রুত হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তাঁকে। নিহত ব্যক্তির নাম আলী আকবর (৭০)। তিনি ফেনী জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলী আকবরের ছেলে আলী হোসেন ফাহাদ ফেনীর শর্শদি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বুধবার সন্ধ্যায় শর্শদি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলা শেষে তাঁকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। ফাহাদের গ্রেপ্তারের খবর শুনে আলী আকবর বড় ছেলেকে নিয়ে থানায় ছুটে গিয়েছিলেন।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা-পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আলী হোসেন ফাহাদকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। থানায় ছেলের হাতে হাতকড়া পরানো দেখে আলী আকবর কথা বলতে ওসির কক্ষে ঢোকেন। সেখানেই তিনি জ্ঞান হারান। ওসির কক্ষের বাইরে অবস্থান করা তাঁর ছেলে ও পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিক তাঁকে উদ্ধার করে পাশের ফেনী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি। পরে নির্দিষ্ট সময়ের পর থানায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে, এমন প্রতিশ্রুতি পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে পরিবারের জিম্মায় দেয় পুলিশ।

আলী হোসেন ফাহাদের মামাতো ভাই জাহিদুল আলম জানান, ফাহাদ ছাত্রলীগ করলেও কোনো অপরাধে জড়িত ছিলেন না। বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন তিনি। সরকার পরিবর্তনের পর বাড়িতে অবস্থান করলেও তেমন একটা বাইরেও যেতেন না। সম্প্রতি তিনি ফেসবুকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বেশ কিছু পোস্ট করেছিলেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মন্তব্য করে পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই সব পোস্টের কিছু স্ক্রিনশট একটি পক্ষ পুলিশকে দিয়েছে। সে কারণেই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

আলী আকবর এর বড় ছেলে আলী এয়াছিন বলেন, ‘ছোট ভাইকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে আমি ও বাবা একসঙ্গে থানায় আসি। এ সময় থানার হাজতখানায় ছোট ভাই ফাহাদকে দেখে বাবা ওসির রুমে যান কথা বলতে। আমি ওসির রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওসির সামনের চেয়ারে বসে বাবা কথা বলার এক পর্যায়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে আমরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

আলী এয়াছিন দাবি করেন, ফাহাদের নামে কোনো মামলা নেই। তবু তাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যার মামলায় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাবা বিএনপির নেতা হয়েও ছেলেকে রক্ষা করতে না পারার বিষয়টি সহ্য করতে পারেননি। এ জন্য তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ফেনী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, ‘ফেনী মডেল থানা-পুলিশের অনুরোধে ছাত্রলীগ নেতা ফাহাদকে আটক করা হয়। পরে তাৎক্ষণিক তাঁকে ফেনী থানায় হস্তান্তর করা হয়। এর পরবর্তীতে কী হয়েছে, সেটি আমার জানা নেই।’

ফেনী মডেল থানার ওসি)মোহাম্মদ সামসুজ্জামান জানান, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফাহাদকে আটক করা হয়েছিল। তবে তাঁর বাবা আমার সঙ্গে কথা বলতে আমার কক্ষে প্রবেশ করেন। কথা বলার একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যান। বাবার আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় মানবিক দিক বিবেচনায় তাঁকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’