নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন | ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে এবার নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে নির্বাচনের জন্য নানা প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

পরে রাত আটটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই বৈঠকের আলোচনা ও নির্দেশনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এ সময় প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিল হবে। এর অর্থ হলো নির্বাচনের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার, সেটি প্রস্তুত করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, গত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে এবার নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সব সম্ভব না হলেও যত বেশি সম্ভব, তাঁদের বাদ দিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়েও মনিটরিং সেল গঠন করা হবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, যাতে অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ছাড়া এক থানার পুলিশকে অন্য থানার দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

উপ–প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনার আলোকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর সেগুলো বাস্তবায়ন করবে।

১৬ হাজার কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা

সংবাদ সম্মেলেন প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে মোতায়েন করা হবে, এটা একটা ইস্যু। সীমান্ত এলাকায় ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে মোতায়েন করা হবে, কতজন আনসার, কতজন পুলিশ সদস্য থাকবেন, সেনাবাহিনী বা বিজিবি কীভাবে থাকবে, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কীভাবে থাকবে, সেগুলো নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৮ লাখের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার হচ্ছে আনসার এবং ১ লাখ ৪১ হাজার হচ্ছে পুলিশের সদস্য।

প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে বলা হয়েছে ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্র থাকবে। তাঁরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন, ১৬ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ করা যায়, সে জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেটি হচ্ছে পুলিশ সদস্যের বডি ক্যামেরা রাখা এবং প্রতিটি কেন্দ্র যাতে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আসে, সেটির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো যাতে মনিটরিং ঠিকমতো করা যায়, সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

‘দরকার হলে রিহার্সাল নির্বাচন’

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগে যে ধরনের নির্বাচন হয়েছিল, সেটা লোকদেখানো নির্বাচন। সে জন্য একটি প্রকৃত নির্বাচন কী করে আয়োজন করতে হয়, সেটির প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কার, কী ভূমিকা, সেটি পরিষ্কার থাকতে হবে। দরকার হলে রিহার্সাল নির্বাচন (নির্বাচনের মহড়া) করতে হবে, যাতে করে অনুশীলন হয়।

প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে বলেছেন, যাতে ভোটাররা প্রশিক্ষিত হতে পারেন। টিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিগুলো প্রচার করতে হবে। জরুরি নম্বর সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অর্ধেক ভোটার নারী, কেউ যেন ভোটের অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করতে না পারে। এ জন্য পর্যাপ্ত নারী কর্মকর্তা মোতায়েন থাকতে হবে।’

প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ১৬ বছর মানুষ ভোট দেখেননি। ভোটারদের স্মৃতিতে আছে ভোটকেন্দ্রে মারামারি, ভোট চুরি। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের যেন একটি ভালো অভিজ্ঞতা হয়, একটা সুন্দর স্মৃতি থাকে, প্রথম ভোট যাঁরা দেবেন, এটা তাঁদের জন্য গৌরবের, তিনি যেন ভালো অনুভব করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভোটের সময় ইন্টারনেট যাতে সচল থাকে এবং প্রকৃত গণমাধ্যম যাতে দায়িত্বপালন করতে পারে, এ জন্য আগে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষকের নামে যাতে কেউ দলীয় কর্মীকে নির্বাচনী কেন্দ্রে পাঠাতে না পারেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।