বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় ধরা পড়া ইলিশ বিক্রির জন্য আনা হয়েছে নগরের পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। ছবিটি মঙ্গলবার বিকেলের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। অথচ বরিশালের বাজারে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ মিলছে না। সরবরাহ কম থাকায় বাজারে বেড়েছে দাম, এতে অনেকেই এই প্রিয় মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মৎস্য অধিদপ্তর ও আড়তদারদের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ মণ ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এর প্রভাব সরাসরি বাজারে পড়েছে। এক বছরে কেজিপ্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা।

গত মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে দেখা যায়, ইলিশের সরবরাহ সীমিত হলেও ক্রেতার আগ্রহ কমেনি। চড়া দাম দিয়েই কিনছেন অনেকে। নগরীর নিউ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা চাকরিজীবী মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘দেড় হাজার টাকা দিয়ে মাঝারি সাইজের দুটি ইলিশ কিনেছি। অথচ আগে একই ধরনের এক হালি ইলিশ ৮০০–১ হাজার টাকায় পাওয়া যেত।’

পোর্ট রোডের লিয়া এন্টারপ্রাইজের আড়তদার নাসির উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার মোকামে প্রায় ৭০ মণ ইলিশ এসেছে, আগের দিন ছিল ৬০ মণ। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। ৯০০ গ্রামের (এলসি) ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার ৫০ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম ওজনেরটি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।

তাঁর ভাষ্য, 'গত বছরের এই সময় একই ওজনের ইলিশ যথাক্রমে ১ হাজার ৭৫০, ১ হাজার ৫৫০ ও ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।' 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। জাটকা মাছ ধরা না কমানো গেলে বড় ইলিশের পরিমাণও বাড়বে না। এ ছাড়া পরিবহন খরচ ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণেও দাম চড়া হতে পারে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক আলফাজ উদ্দিন শেখ বলেন, 'ইলিশের নদীগুলোর চ্যানেলে নাব্যতা সংকট থাকলে উৎপাদন কমে যায়। আবার জাটকা ও ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষা করতে না পারলেও প্রভাব পড়ে। দাম বাড়ার পেছনে পরিবহন ব্যয় কিংবা বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটিও থাকতে পারে। বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা দরকার।' 

ভরা বর্ষায় ইলিশের আশায় এখনো নদীমুখো জেলেরা। মেঘনা, কালাবদর, তেঁতুলিয়া, কীর্তনখোলা, সন্ধ্যা, সুগন্ধ্যা, আড়িয়াল খাঁসহ বিভিন্ন নদীতে চলছে মাছ ধরার তৎপরতা। তবে জেলেদের দাবি, ইলিশ উঠছে কম।

বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহনের জেলে আ ছালাম বলেন, 'নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমেছেন তাঁরা। কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও তা পর্যাপ্ত নয়। মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার জেলে আনিছ মাঝি বলেন, “সারা বছরের বড় সময় নিষেধাজ্ঞায় কাটে। এখন ভরা মৌসুমেও তেমন মাছ নেই।' 

হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, 'বর্তমানে ধরা পড়া ইলিশের ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি। তবে বাজারে দাম যে বাড়ছে, সেটা সত্য।'