প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
![]() |
চট্টগ্রামে এক ব্যক্তিকে পুলিশে দেওয়া নিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ | ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া |
চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকায় টহল জোরদার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার রাতে আরিফুল ইসলাম নামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে অভিযুক্ত করে থানায় নিয়ে যান ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। খবর পেয়ে শিবিরের নেতা-কর্মীরা আরিফুল ইসলামকে ছাড়িয়ে আনতে যান। আরিফকে নিজেদের সংগঠনের সাথি দাবি করে শিবির। এরপর বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী আসার পর দিবাগত রাত তিনটার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বলেন, এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দোকানপাটও সব খোলা। লোকজনের চলাচলও স্বাভাবিক। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশের টহল রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আরিফুলকে থানা থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রদলের কর্মীরা বাধা দেন। এ সময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে থানার আশপাশে জড়ো হতে থাকেন শিবির ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। উভয় পক্ষ স্লোগান দিয়ে চকবাজারের সড়কে অবস্থান নেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ আসার পরও উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকে। শিবিরের কর্মীরা অবস্থান নেন অলি খাঁ মসজিদ এলাকায় আর ছাত্রদলের কর্মীরা গুলজারের সামনে। তাদের মধ্যে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পাথরও ছুড়ে মারে উভয় পক্ষ। বেশির ভাগ নেতা-কর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। রাত তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরা সরে যান।
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের এক ছাত্রলীগকর্মীকে আটক করে চকবাজার থানায় সোপর্দ করে ছাত্রদল। তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে যাওয়া শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সাইফুল বলেন, শিবিরের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরাও রাতে যোগ দেন। সংঘর্ষ প্রায় রাত আড়াইটা পর্যন্ত চলে। ছাত্রদল ও যুবদল সমন্বিতভাবে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করেছে।
নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির আহমেদ দাবি করেন, সংঘর্ষে ছাত্রদলের দুজন গুলিবিদ্ধ ও আটজন আহত হয়েছেন। তাঁরা চিকিৎসাধীন, তবে বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম নগর উত্তরের সভাপতি তানজির হোসেনের দাবি, মহসিন কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে মারধর করেছে ছাত্রদল। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আরিফুলের ছবি থাকলেও তিনি শিবিরের সাথি। মারধরের পর আরিফুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁরা আরিফুলকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলেন।
তানজির বলেন, ‘আরিফুলকে নিয়ে আসার সময় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা হামলা করেন। তাঁদের কাছে রামদা ও দেশি অস্ত্র ছিল। এ ঘটনায় আমাদের ২২ জন কর্মী আহত ও ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। আহত ব্যক্তিরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
তানজিরের অভিযোগ, ‘চকবাজার এলাকায় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা চাঁদাবাজি করতে গেলে আমরা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছি। মূল সমস্যা এখানেই। চাঁদাবাজি করতে না পারার ক্ষোভে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রদল ও যুবদল।’