আশফাকুর রহমান রাসেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ভাঙনের কবলে পড়া বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন এক বাসিন্দা। ঘর হারিয়ে এখন অন্যত্র যাওয়ার প্রস্তুতি। ছবিটি তোলা হয়েছিল গত বছর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা তীরবর্তী এলাকা থেকে | পদ্মা ট্রিবিউন |
বর্ষার শুরু থেকেই টানা বৃষ্টি। ফুলে-ফেঁপে উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদী। নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভাঙনের ভয়। আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী হাজারো মানুষের। এখনো তীব্র ভাঙন না শুরু হলেও সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তত চারটি ইউনিয়নের অনেক গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কবরস্থান ও আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা তীরবর্তী চরাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। এরা বছরের পর বছর ধরে নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন। কেউ কেউ এক জায়গায় কয়েকবার ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ আবার গ্রাম ছেড়ে বরেন্দ্র অঞ্চল বা অন্য জেলায় চলে গেছেন। সরকার ১৯৯৫ সাল থেকে পদ্মা ভাঙন রোধে নানা উদ্যোগ নিলেও আজও কার্যকর কোনো স্থায়ী বাঁধ হয়নি। এতে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষায় ভাঙন বেড়ে যায়। প্রতিদিনই ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের কাছে থাকা মানুষেরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে বসতভিটা ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে ৩ এপ্রিল ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ. ন. ম. বজলুর রশীদ। তিনি বলেন, '২৫ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি রক্ষা পাবে।'
সরকারি হিসাবে, গত এক দশকে অন্তত এক হাজার মানুষ বসতভিটা হারিয়েছেন। তবে স্থানীয়দের মতে, এই সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি। দুই হাজার হেক্টরের বেশি আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকায়। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পদ্মার মোহনা। বর্ষায় ফারাক্কার গেট খুলে দিলে পদ্মা রাক্ষুসী রূপ নেয়। জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেললেও সেগুলো ধুয়ে যায়, ভাঙন থামে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অস্থায়ী বাঁধে কোনো কাজ হয় না, বরং অর্থ লোপাট হয়। সময়মতো স্থায়ী বাঁধ হলে হাজারো পরিবারকে রক্ষা করা যেত।
পাঁকা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘১৯৯৫ সাল থেকে কত আবেদন করেছি, কতবার পাউবোর অফিসে গেছি! শুধু আশ্বাস পাই, কাজ কিছু হয় না।’
গমের চর গ্রামের ল্যাচন আরা বেগম বলেন, ‘দুইবার ঘর হারিয়েছি। এবার নদী এসে দাঁড়িয়েছে বাড়ির একশ গজ দূরে। যাব কোথায়?’
দিনমজুর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মা, স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে থাকি। নদী এসে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে। সরকারের লোক আসে, দেখে যায়, কিন্তু কিছু করে না। নদী যদি কবরস্থানও নিয়ে নেয়, তাহলে মরার পরও ঠাঁই থাকবে না।’
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক তারেক আজিজ বলেন, ‘এবার বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। ভারত থেকে গঙ্গার পানি এসে বাড়াচ্ছে পদ্মার স্রোত। সাধারণত শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় বড় ধরনের ভাঙন দেখা দেয়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, ‘প্রকল্পটি এখনো একনেকের অনুমোদন পায়নি। সব প্রক্রিয়া শেষে বাস্তব কাজ শুরু হতে পারে আগামী বছর।’