প্রতিনিধি ফরিদপুর
![]() |
বৃহস্পতিবারে এ কে আজাদের বাসা থেকে বের হয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীরা পাশে ভুমি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল বের করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ফরিদপুর–৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের চড়াও হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলায় আসামি হিসেবে ফরিদপুর সাংগঠনিক মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফাসহ দলটি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৬ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ কে আজাদের ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীর বাসভবনে চড়াও হন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। ওই বাড়িতে গোপন বৈঠক করছে আওয়ামী লীগ—এমন অভিযোগ এনে তাঁরা ওই বাড়িতে যান।
এ ঘটনায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় হামীম গ্রুপের ল্যান্ড হেড অফিসার মোহাম্মদ রাফিজুল খান (৪০) ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলার আবেদন জমা দেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ জনকে।
মামলার আবেদনটি গ্রহণ করেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার আহাদউজ্জামান। তিনি জানান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাইরে আছেন। তিনি এলে বিষয়টি তাঁকে জানানো হবে।
মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে তিনি হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের শহরের ঝিলটুলীর অফিস কাম বাসভবনে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন, নিরাপত্তাকর্মী মো. মেহেদী হাসান, তত্ত্বাবধায়ক মো. জালাল শেখ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুল হান্নান, গৃহপরিচারিকা মাজেদা বেগম, সিসিটিভি অপারেটর সেলিম হোসেন ও সহকারী শাওন শেখ উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় একদল উগ্র সন্ত্রাসী হঠাৎ বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মো. মেহেদী হাসানকে খুন–জখমের হুমকি দিয়ে এ কে আজাদের বাড়িতে প্রবেশ করে ত্রাস সৃষ্টি করে। তারা বাড়ির ভেতর ঢুকে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে।
মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, বাদী রাফিজুল আসামিদের গালাগাল শুনে কক্ষ থেকে বের হয়ে উঠানে আসার সঙ্গে সঙ্গে ১ নম্বর আসামি (গোলাম মোস্তফা) হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর স্যার এ কে আজাদ যেন ফরিদপুর না আসে। যদি আসে তাহলে তাঁকে হত্যা করে লাশ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেব।’ আসামিরা হুমকি আরও দিয়ে বলেন, ‘এ কে আজাদের বাড়ি, ঘর, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যা আছে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়েপুড়িয়ে ভস্ম করে দেব। জনসেবা করার স্বাদ মিটিয়ে দেব।’
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শাহরিয়ার হোসেন (৩৮), কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান চৌধুরী (৫৬), ফরিদপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান (৫৫), মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম (৪৪), মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি ক্যাপ্টেন সোহাগ (৪০)।
এ বিষয়ে বিএনপির নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগের গোপন সভা হচ্ছে—এমন তথ্য পেয়ে আমরা গিয়েছিলাম। ওখানে আমি নিজে কিংবা আমার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কেউ কোনো হুমকি দেননি। একটি ঢিলও ছোড়া হয়নি। কেউ থানায় অভিযোগ করতেই পারেন, তবে তা তাঁকে প্রমাণ করতে হবে।’
এ কে আজাদ হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্বত্বাধিকারী। তিনি ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ফরিদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ কে আজাদকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ কে আজাদ।
মামলার আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. এম এ জলিল বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।