[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বিবিসির প্রতিবেদন অনৈতিক সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত: জয়

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

সজীব ওয়াজেদ | ফাইল ছবি: রয়টার্স

চব্বিশের ছাত্র আন্দোলন দমাতে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুলির নির্দেশ নিয়ে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।   তার ভাষায়, 'এটি বিবিসির অনৈতিক সাংবাদিকতার একটি লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত।'

বুধবার নিজের ফেসবুক পাতায় জয় এই প্রতিবেদনকে ‘বিকৃত তথ্যভিত্তিক’ এবং ‘একপেশে’ বলে মন্তব্য করেন।

তিনি লেখেন, 'বিবিসি সম্প্রতি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সংঘটিত মর্মান্তিক ঘটনার একটি কথিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপের অংশবিশেষ তুলে ধরে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তা উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর অনুপস্থিত।' 

বিবিসির প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তাদের ভাষ্যমতে, এ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপের অডিও ক্লিপের সত্যতা তারা যাচাই করেছে। এই অডিওটি চলতি বছরের মার্চে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, যেখানেই পাবে, গুলি করবে।' বিবিসি বলছে, এটি ১৮ জুলাইয়ের একটি ফোনালাপ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশের হাতে ‘সামরিক মানের রাইফেল’ ব্যবহারের কথা সে সময়কার নথিতেও রয়েছে।

তবে জয় প্রশ্ন তুলেছেন, এই অডিওর প্রেক্ষাপট উপস্থাপন না করে কেবল কয়েক সেকেন্ডের একটি ক্লিপের ভিত্তিতে এমন গম্ভীর অভিযোগ কীভাবে তোলা যায়?

তিনি লিখেছেন, 'বিবিসি বলছে, তারা ফরেনসিক যাচাই করেছে, অথচ নিজেরা নয়—এটা করেছে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। তারা অডিওর শব্দ, স্বর ও কম্পাঙ্ক বিশ্লেষণ করে বলেছে, এটি ‘জাল নয়’। কিন্তু কেউ কি দেখেছে, কখন, কোথায়, কী প্রেক্ষাপটে এটি রেকর্ড করা হয়েছিল?' 

জয়ের দাবি, '১৮ জুলাই শেখ হাসিনার এই কথিত ফোনালাপের আগের দিন চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ১৫ নেতা-কর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়। রাজধানীতে ১৬ জুলাই থেকে সরকারি স্থাপনায় ধারাবাহিক হামলা শুরু হয়। রামপুরা টিভি স্টেশনে আগুন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়া—এসব ঘটে ১৮ জুলাইয়ের ভেতরেই। কিন্তু বিবিসি এসব কিছুই তুলে ধরেনি।' 

তিনি বলেন, 'সেদিন পুলিশের গুলি চালনার সময় সেনা সদস্যরা হঠাৎ কেন সরে গেলেন, তাও দেখানো হয়নি। অথচ বিবিসি নিশ্চিতভাবেই সেনাবাহিনীর বক্তব্য নিতে পারত। এড়িয়ে গেছে সেটিও।' 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন। বিবিসির ভাষায়, এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশের হাতে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা। কিন্তু জয় প্রশ্ন তুলেছেন, 'পুলিশের প্রাণরক্ষার চেষ্টা, চারদিক থেকে ঘেরাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কেন বিবিসি গুরুত্ব দেয়নি? সেনা সদস্যরা সরে যাওয়ার পরই পুলিশ গুলি শুরু করে—এই তথ্যই বা কে দিল? এবং ড্রোন দিয়ে কে ছবি তুলছিল?' 

তিনি আরও লেখেন, 'ওইদিন আন্দোলনকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছয় পুলিশ সদস্য নিহত হন। তাদের কারও ময়নাতদন্ত হয়নি। কিন্তু এসব তথ্য অনুসন্ধানের অংশ হয়নি।' 

জয় বলেন, 'যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তারাই বলছে, ১৮ জুলাই ছিল তাদের ‘চূড়ান্ত ধাপ’। অথচ বিবিসি সেদিনের আগে-পরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা গোপন রেখে শুধু পুলিশের গুলি ও শেখ হাসিনার কথিত অডিওর দিকে মনোযোগ দিয়েছে।' 

তিনি আরও লিখেছেন, 'ধরে নেওয়া যাক, এই ঘটনা লন্ডনে ঘটত, বিবিসি সদরদপ্তর ঘেরাও হয়ে যেত, পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ত, প্রাণহানির আশঙ্কা থাকত—তাহলে কি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পুলিশের আত্মরক্ষার নির্দেশ দিতেন না? আর তখন বিবিসি কি এমনই একপেশে প্রতিবেদন প্রকাশ করত?' 

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, অডিওটি সত্যি কি না, তা নিয়ে তারা নিশ্চিত নন। কিন্তু বিবিসি বলছে, ফরেনসিক পরীক্ষা বলেছে, এটি ‘এডিট করা নয়’, ‘জাল নয়’।

তবে জয় বলেন, 'সত্যতা যাচাই মানে শুধু অডিও বিশ্লেষণ নয়, বরং প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি, অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে দেখা—এই কাজটি বিবিসি করেনি। এটি সরাসরি প্রপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা।' 

তিনি দাবি করেন, 'প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, গুলি শুরু হয় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে—তারও আগে খবর ছড়ায় শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়েছেন। সারাদেশেই থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশাসনিক ভবনে হামলা চলছিল তখন। পুলিশ ছিল অসহায়। বিবিসি সেটি দেখেনি।' 

সবশেষে জয় বলেন, 'এটি কেবল পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন নয়, বরং একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা। দেশের সংকটময় সময়ে বিবিসির এমন ভূমিকায় আমরা হতাশ।' 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন