সংবাদদাতা নওগাঁ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা গ্রামে অহিমায়িত মডেল ঘরে সংরক্ষিত কৃষক সানোয়ার হোসেনের আলু পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ভালো দামে আলু বিক্রির আশায় সরকার নির্মাণ করে দিয়েছে 'অহিমায়িত মডেল ঘর' । উদ্দেশ্য ছিল সহজে ও কম খরচে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে কৃষকদের লাভবান করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। এসব ঘরে রাখা আলু পঁচে যাচ্ছে, আর এতে কৃষক পড়ছেন বড় ধরনের ক্ষতিতে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব মডেল ঘর পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে নির্জন জায়গায়। নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, আবার ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও নেই। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই আলু পঁচে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক, ভেস্তে যাচ্ছে কোটি টাকার সরকারি প্রকল্প।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টন। অথচ জেলার সাতটি হিমাগারে ধারণক্ষমতা মাত্র ৪৬ হাজার ৫৩০ টন। ফলে হিমাগার সংকটে অনেক কৃষকই মডেল ঘরকেই ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘আলুর বহুমুখী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্প’ থেকে কৃষকদের মাঝে ৩৬টি অহিমায়িত মডেল ঘর বিতরণ করা হয়। প্রতিটি ঘর তৈরি করতে ব্যয় হয় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বাঁশ, কাঠ, টিন ও কর্কশীট দিয়ে তৈরি এসব ঘরে ২৫-৩০ টন আলু চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করার কথা।
তিন মাসের মাথায় আলু পচে গেল

বদলগাছী উপজেলার কোলা গ্রামের কৃষক সানোয়ার হোসেন প্রথম বছর বেশ আশাবাদী ছিলেন। তিনি বলেন, 'ঘরে ৩০০ মন আলু রেখেছিলাম। ভালোভাবে শুকিয়ে বাছাই করে রেখেছিলাম। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই ১০০ মন আলু পঁচে গেল। বাজার দরে এর ক্ষতি প্রায় ৫০ হাজার টাকা।' 

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, 'পুরো ১৩০ মন আলু রেখেছিলাম। সবই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন থেকে ওই ঘরে আর আলু রাখব না।' 

আরেক কৃষক সোহেল রানা বলেন, 'হিমাগারে আলু রাখতে অনেক খরচ। তাই সরকার যে ঘর দিয়েছে, তাতে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম সুবিধা হবে। কিন্তু এখন দেখি উল্টো ক্ষতি। আলু পচে গেছে।' 

হুগলবাড়ী গ্রামের কৃষক মামুন বলেন, 'শুরুতে আলোচনা হয়েছিল কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এখন কেউ আগ্রহী না। ভয় হয় চুরি হবে, আবার নষ্টও হয়ে যায়।'

তিলোকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহিদুল ইসলাম রিংকু বলেন, 'আমরা ১৫ জন মিলে আলু রেখেছিলাম। প্রথম বছর কিছুটা লাভ হয়েছিল। এবার ৩০০ মন রেখেছিলাম, কিছু পঁচে গেছে। দামও নেই, তাই বিক্রিও হচ্ছে না।' 

নওগাঁ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সোহাগ সরকার বলেন, 'এই ঘরগুলোতে সংরক্ষণের খরচ কম। বেশিরভাগ ঘরেই আলু সংরক্ষণ হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো আলু আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন, তাই ঘর খালি। আর কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিগত কারণে ব্যবহার করেননি।'