আসাফ-উদ-দৌলা নিওন বগুড়া

সান্তাহারের রথবাড়ী এলাকায় ২০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল। ছবিটি সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বগুড়া উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছিল ২০ শয্যার করে তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে রয়ে গেছে অচল অবস্থায়। অনেক সময় পার হলেও এর কোনোটিই এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি।

এই তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে জেলার নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ ও আদমদীঘিতে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, প্রতিটি স্থানে শুধুমাত্র সীমিত আকারে বহির্বিভাগ খোলা রাখা সম্ভব হয়েছে। সেটিও মূলত ওষুধ সরবরাহ ও প্রাথমিক সেবা দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-দ্বিধায় দুই যুগ পার হলেও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ হয়নি। ফলে অকেজো হয়ে পড়ে আছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল বাজারে অবস্থিত ২০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল ভবন  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নন্দীগ্রামে কেবল অবকাঠামো—সেবা নেই

ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বিজরুল বাজারে ২০০৬ সালে উদ্বোধন হয় নন্দীগ্রামের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটির। উপজেলার মূল শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরের এই এলাকাটি মূল চাহিদার কেন্দ্র হলেও সেখানে আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়নি। ব্যয় হয় ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

২০০৮ সালে এই কেন্দ্রের জন্য ১৮টি পদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু আজও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্থায়ীভাবে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন না। ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে, জানালা-দরজা নষ্ট। নিয়োগ থাকলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা অন্য জায়গায় কাজ করছেন।

নন্দীগ্রাম পৌরসভার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, 'বাড়ির পাশেই ভবনটা, অথচ চিকিৎসা নেই। রাজনৈতিক টানাপোড়েনেই এটি এখন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে।' 

সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. আতিক আহমেদ বলেন, 'সামান্য কিছু কর্মী নিয়ে আমরা কেবল বহির্বিভাগ চালিয়ে যাচ্ছি। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় মূল ভবন কার্যত অচল। যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু সেগুলো চালানোর মতো টেকনিশিয়ান বা চিকিৎসক নেই। বেতনভাতা অনিয়মিত হওয়ায় এখান থেকে অনেকেই চলে যেতে চান।' 

শিবগঞ্জেও একই চিত্র, এখন অপেক্ষা সচিবের পরিদর্শনের

শিবগঞ্জের আলীয়ারহাট এলাকায় স্থাপিত ২০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির জন্য ব্যয় হয় ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এটি দীর্ঘ সময় ব্যবহারবিহীন ছিল। বর্তমানে এখানে একজন উপসহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা বহির্বিভাগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

চিকিৎসকের পদ থাকলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা অন্য জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, হাসপাতালটি চালুর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আগামীকাল পরিদর্শনে আসছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ এস এম রুহুল আমিন জানান, 'আলীয়ারহাটের কেন্দ্রটি সচল করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সচিব মহোদয় এসে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করবেন, তারপর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' 

সান্তাহার: ১৯ বছরেও শেষ হয়নি কার্যক্রম

সান্তাহার শহরের রথবাড়ী এলাকায় স্থাপিত স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লেগেছে প্রায় দুই দশক। প্রথম পর্যায়ে এক প্রতিষ্ঠান ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে। কিন্তু বিল আদায়ের পর কাজ ফেলে রেখে চলে যায়।

পরে ২০১৯ সালে আবার ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দে অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হয় ২০২১ সালে। কিন্তু এখনও এখানে পুরোদমে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, 'এই ভবন তৈরিই শেষ হতে সময় লেগেছে ১৯ বছর। অথচ আমরা এখনো চিকিৎসার জন্য বহু দূর যেতে বাধ্য হচ্ছি। আগে এই ভবন অপরাধীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছিল।' 

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে রাব্বি জানান, 'সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানকার ফার্মাসিস্ট ও একজন কর্মী প্রাথমিক কিছু কাজ করেন- যক্ষার ওষুধ দেওয়া, টিকাদান কর্মসূচি ইত্যাদি। সরকারি ছুটির দিনে সেবাও বন্ধ থাকে।'