নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
ঢাকায় মেট্রোরেলের পিলারে শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটে যাওয়া নানা অপরাধের চিত্র তুলে ধরে নতুন গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঢাকার মেট্রোরেলের পিলারে ‘ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম’ শিরোনামে নতুন করে গ্রাফিতি আঁকা হচ্ছে। এরইমধ্যে দিয়াবাড়ি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত আঁকিবুকির কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কারওয়ান বাজারের একটি পিলারে আগে আঁকা ব্লগার হত্যার বিচার দাবির গ্রাফিতি মুছে ফেলা নিয়ে। পুরোনো গ্রাফিতি মুছে নতুন চিত্র আঁকা হয়েছে, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে প্রবল প্রতিক্রিয়া।
বিষয়টি স্বীকার করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। তারা জানিয়েছে, অনুমতি ছাড়া কে বা কারা গ্রাফিতি মুছে ফেলেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
শুক্রবার সরেজমিনে কারওয়ান বাজারের সেই পিলারে গিয়ে দেখা গেছে, পুরোনো গ্রাফিতির কোনো চিহ্ন নেই। নতুন চিত্রকর্ম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন সমাজকর্মী, সাংবাদিক, লেখক ও নাগরিকরা। অনেকে তাদের ফেসবুকে ব্লগার হত্যার আগের গ্রাফিতির ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘ছবি মুছে দিলেই ইতিহাস মুছে যায় না।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ লিখেছেন, 'পিলারের ছবি মুছে ফেললেই ইতিহাস মুছে যায় না। ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পর হাসিনার গোয়েন্দা বাহিনী ও ইসলামিস্টদের মধ্যে এক অদ্ভুত ঐক্য গড়ে উঠেছিল। এই ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা আশ্চর্য নয়।'
লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম লেখেন, 'শেখ হাসিনার শাসনে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন মেট্রোর পিলারে আঁকা হয়েছিল। কিন্তু ব্লগার হত্যাকাণ্ডের গ্রাফিতি মুছে দেওয়া হলো, যারা এ হত্যা ঘটিয়েছিল তারাই সেটা করেছে।'
তবে ভিন্ন মতও রয়েছে। ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক বিদ্রুপ করে লেখেন, “এটা এঁকেছিল কোন বলদে? মুছে ফেলে ভালোই করেছে।”
অন্যদিকে, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ নামে একজন মাদরাসা শিক্ষক লেখেন, 'ফেসবুকে এসে সুখবর পেলাম-ব্লগারদের গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে। শুকরান লাহুম।'
ইমতিয়াজ মির্জা নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, 'ফ্যাসিস্টবিরোধী গ্রাফিতিকে মুছে ফেলা জাতির বিরুদ্ধে অন্যায়। ব্লগার হত্যায় কে মদত দিয়েছে, তা জানা সবার উচিত।'
ব্লগার হত্যার বিচার দাবি করে আঁকা গ্রাফিতি মুছে ফেলা প্রসঙ্গে বাকী বিল্লাহ বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদকে তার স্বার্থে ব্যবহার করেছে। যারা ব্লগার হত্যায় যুক্ত ছিল, তাদের অনেকেই ৫ আগস্টের পর ছাড়া পায়। সরকার জঙ্গিদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। এই বিষয়গুলো খোলাসা হওয়া দরকার।'
তিনি বলেন, 'যার বিরুদ্ধে ব্লগার হত্যার অভিযোগ রয়েছে, সেই জসীম উদ্দিন রহমানীকে ছাড়া হয়েছে। হিজবুত তাহরীর আবার প্রকাশ্যে কর্মসূচি করেছে।
ডিএনসিসি’র প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, 'নতুন গ্রাফিতিতে দেশের গত ১৭ বছরের দুঃশাসন, বাকস্বাধীনতা হরণ, নির্যাতনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে। তবে ব্লগার হত্যার দাবিতে আঁকা গ্রাফিতি মুছে ফেলার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। অনুমতি ছাড়া কেউ এটা করলে ব্যবস্থা নেব।'
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন , 'ব্লগার হত্যার বিচার দাবির গ্রাফিতি মুছে ফেলার খবর আমরাও পেয়েছি। রোববার অফিস খোলার পর তদন্ত করে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মানবাধিকার কর্মী নূর খান মনে করেন, 'গ্রাফিতি মুছে দেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, ব্লগার হত্যায় জড়িত রাজনীতি আবার শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গি নেই—এই দাবি জঙ্গিবাদকে আরও উৎসাহিত করতে পারে। এতে নতুন করে ভয় তৈরি হয়েছে।'
ব্লগার হত্যা
২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে অন্তত ১২ জন মুক্তমনা ব্লগার ও লেখক খুন হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, নাজিম উদ্দিন সামাদ এবং জুলহাজ মান্নানসহ আরও অনেকে। হত্যাকাণ্ডে আরসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম উঠে আসে। অভিজিৎ হত্যা মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত জঙ্গিদের মধ্যে অনেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।