নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
জাহেদ উর রহমান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান ধর্মের নামে আবারও সহিংস জনতা গঠনের প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি প্রশ্ন তোলেন— কারা এই মব তৈরি করছে, তাদের উদ্দেশ্য কী, আর কার ইশারায় এসব ঘটছে?
জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘মাঝখানে কিছুদিন বিরতি ছিল। কিন্তু আবারও শুরু হয়েছে ইসলামের নাম ব্যবহার করে জনতা জড়ো করা এবং ভয়ানক সব ঘটনা ঘটানো। মূলত বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই ধারা চলছে।’
তিনি বলেন, সরকারের নির্লিপ্ততার কারণেই এসব ঘটনা বেড়ে চলেছে। তার মতে, এটি পরিকল্পিত। সরকার আসলে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে চায় না। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
গত দুই দিনে ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনার কথা তুলে ধরে জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘প্রথম ঘটনা সিলেটের এক পর্যটন এলাকায়। সেখানে কিছু ধর্মীয় পোশাকধারী লোকজন পর্যটকদের বিরুদ্ধে “বেহায়াপনা”র অভিযোগ তুলে বাধা দিয়েছেন। আমাদের হাতে একটি ভিডিও এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, তারা কড়াভাবে পর্যটকদের সতর্ক করছেন।’
‘দ্বিতীয় ঘটনা টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে। শাকিব খানের “তাণ্ডব” সিনেমাটি প্রদর্শনের কথা ছিল সেখানে। একটি অডিটরিয়াম ভাড়া করে বিশেষ ব্যবস্থায় সিনেমাটি দেখানোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু কিছু ধর্মীয় পরিচয়ধারী মানুষ সিনেমাটি বন্ধ করে দেন। এর একটি ভিডিও-ও আমাদের হাতে এসেছে।’
‘তৃতীয় ঘটনাটি আরও দুঃখজনক,’ বলেন জাহেদ উর রহমান। ‘চারুকলা অনুষদের এক ছাত্র শাকিল আহমেদ আত্মহত্যা করেছেন। মাস কয়েক আগে তিনি ধর্ম নিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন, যা পরে মুছে ফেলেন। কিন্তু কেউ একজন সেটির স্ক্রিনশট রেখে দিয়েছিল এবং সম্প্রতি তা প্রকাশ করে। এরপর কিছু লোক শাকিলের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয় ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রবণতা নতুন নয়। এটা একটা মগের মুলুকের লক্ষণ। কেউ নাস্তিক— এমন সন্দেহ হলেই তাকে নিয়ে যা খুশি করা যায়— এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন যেন জনতা গঠন করেই সবকিছু করা হচ্ছে।’
জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে— এই নীতিটিই মানতে হবে। যারা এটি মানবেন না, তারা অপরাধ করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু সরকার তা নিচ্ছে না, কারণ তাদের নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য আছে। সামনে নির্বাচন, রাজনৈতিক উত্তেজনাও রয়েছে। যদিও আমরা আশাবাদী, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে উত্তেজনা কমবে বা কেটে যাবে। তবে তারপরও একটি গোষ্ঠী মাঠে নিজেদের শক্তি দেখাতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনার মাধ্যমে দেশে নতুন করে সংঘাত তৈরির আশঙ্কা আছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।’