প্রতিনিধি ফরিদপুর

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) | ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কমিটিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও ফ্যাসিবাদের দোসররা স্থান পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফরিদপুরের সদস্যসচিব সোহেল রানা। ‘উল্টে যাচ্ছে গণেশ’ উল্লেখ করে এর ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘সাপের ডিম সাপেই খাবে।’ গত শনিবার সোহেল রানা তাঁর ফেসবুক পোস্টে এসব কথা বলেন।

৫ জুন এনসিপির ফরিদপুর জেলা শাখার ২৩ সদস্যের সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী তিন মাস অথবা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগপর্যন্ত এ কমিটির মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে।

এ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রয়েছেন সৈয়দা নীলিমা (দোলা)। যুগ্ম সমন্বয়কারী রয়েছেন এস এম জাহিদ, সাইফ হাসান খান, জিল্লুর রহমান, বায়েজিদ হোসেন ও কামাল হোসাইন। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন ফিরোজ হোসেন মোল্লা, মিরাজ উদ্দীন শরীফ, শেখ বাচ্চু, রফিকুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, ছায়েমা আক্তার, আরমানুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, সোহান ইসলাম, রনি মোল্লা, হায়দার মোল্লা, শেখ জাহিদ, জুবায়ের রহমান, এস এম আকাশ, নবীন শেখ, সাইফুল ইসলাম ও রুবেল মিয়া।

এর আগে ৩ জুন কেন্দ্র স্বাক্ষরিত সংগঠনটির শ্রমিক উইংসের জেলা কো-অর্ডিনেশনের ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে প্রধান সমন্বয়কারী রয়েছেন এস এম জুনায়েদ। আগামী তিন মাসের জন্য এ কমিটি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এই দুটি কমিটি সম্পর্কে ফেসবুক পোস্টে সোহেল রানা বলেন, ‘উল্টে যাচ্ছে গণেশ। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দল এনসিপি। শহীদের রক্ত, হায়েনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া বীরদের ত্যাগের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি রাজনৈতিক দল। দেখতে পাচ্ছি আমরা, তৎকালীন সময়ের আওয়ামী লীগের সম্মানীত দালালেরা, ফ্যাসিবাদের কোলে বসে থাকা দোসররা মুখ লুকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিচ্ছেন এই দলে। বাদ যাচ্ছে না সহযোগী সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদও।’

সোহেল রানা আরও উল্লেখ করেন, ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার আগে কখনো খতিয়ে দেখার চেষ্টাও করেননি, জুলাইয়ে তাদের কী ভূমিকা ছিল। কার অবস্থান কী ছিল! জুলাইয়ের পক্ষে নাকি বিপক্ষে? যাদের পদ বা পদবি দেবেন, তারা কী চায়—মানুষের জন্য রাজনীতি নাকি টেন্ডারবাজি, দখলদারী করে নিজের পকেট ভারী। সময় ভালো চলছে...বসন্তের কোকিল আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে, সময় খারাপ হলে এদের কি আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে? রীতিমতো অবাক করে দিচ্ছেন আমাদের! যেটার ফলাফল হবে—সাপের ডিম সাপেই খাবে!’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল রানা  বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকার বিদায়ের পর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছিল তরুণসমাজ। তরুণদের ভরসাস্থল জুলাইয়ে গড়ে ওঠা এনসিপি। তারা এনসিপিকে ভোট দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু আমরা হতাশ। ফরিদপুরের দুটি কমিটিতেই আওয়ামী লীগের দোসরদের স্থান দেওয়া হয়েছে। জুলাই আন্দোলনবিরোধী ছিল কয়েকজন, তারাও কমিটিতে। এ ছাড়া ফরিদপুরের কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে। এগুলো দেখে অনেকে আমাদের কাছে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।’

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে এনিসপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা বলেন, ‘রাজনীতি করতে এলে কিছু বিতর্ক হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে অনেকের ছবি থাকতে পারে। কিন্তু আমরা ছবির রাজনীতি দেখছি না। কারণ, সেই লোকের তো আওয়ামী লীগে পদ-পদবি নেই। কেউ যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে, এমন অভিযোগ পেলে সেটা দেখা হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সৈয়দা নীলিমা উল্টো অভিযোগ করেন, ‘জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটিতে তো ছাত্রদল মাইন্ডের লোকজনও রয়েছে।’