প্রতিনিধি কুমিল্লা
![]() |
‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের’ ঢাকা–চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লায় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার রাতে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হল মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চার প্রধান দাবিতে রাজধানী থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম অভিমুখী রোডমার্চ কুমিল্লায় পৌঁছেছে। দেশের বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের’ ব্যানারে আয়োজিত এই লংমার্চ আজ শুক্রবার সন্ধ্যার আগে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে এসে পৌঁছায়। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে সেখানে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
জনসভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিমণ্ডলীর কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদের কোনো দালালকে বাংলাদেশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়া হবে না। আমাদের এই রোডমার্চের তথ্য এতক্ষণে নিশ্চয়ই প্রধান উপদেষ্টার কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। যদি এর পরও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব। আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এই আন্দোলন দীর্ঘদিনের।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে আপনার চেয়ে বড় বড় প্লেয়ার দেশকে সাম্রাজ্যবাদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল; কিন্তু আমাদের আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। হাসিনা, খালেদা, এরশাদ—কেউই সফল হয়নি, আপনি তো অনেক পরের প্লেয়ার।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলীর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সমন্বয়ক মাসুদ খান, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিনউদ্দীন চৌধুরী, সচেতন রাজনৈতিক ফোরামের কুমিল্লার সমন্বয়ক শেখ আবদুল মান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোমেন প্রমুখ।
সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের’ রোডমার্চের জনসভার একাংশ। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জনসভায় বক্তারা বলেন, অতীতের সরকারের মতো এই সরকারও দেশকে সাম্রাজ্যবাদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। অন্তর্বর্তী সরকার, দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন; কিন্তু দেশকে সাম্রাজ্যবাদের হাতে তুলে দেওয়া এই সরকারের দায়িত্ব হতে পারে না। অবিলম্বে বিদেশি শক্তির কাছে বন্দর ইজারা বা করিডর দেওয়ার যেকোনো পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। যদি সরকার ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
জনসভা সঞ্চালনা করেন রোডমার্চের কুমিল্লার জনসভা আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব খায়রুল আনাম। এ সময় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদসহ বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
![]() |
রোডমার্চের জনসভায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এর আগে আজ সন্ধ্যার দিকে রোডমার্চটি কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হল মাঠে প্রবেশ করে। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘বন্দর করিডর বিদেশিদের দেব না’, ‘মা-মাটি-মোহনা বিদেশিদের দেব না’, ‘বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত রুখে দাঁড়ান’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘আমেরিকার কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে হবে’ ইত্যাদি।
রোডমার্চটি টাউন হলে পৌঁছার পর প্রথমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদী গান, নাটকসহ বিভিন্ন পরিবেশন করে। এরপর শুরু হয় জনসভার বক্তৃতা। কুমিল্লার জনসভা শেষে রাতেই রোডমার্চটি ফেনীর উদ্দেশে রওনা হয়। শনিবার সকালে ফেনী থেকে কর্মসূচি শুরু হয়ে ওই দিন বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশ করে রোডমার্চটি সমাপ্তির কথা রয়েছে। এর আগে আজ সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চ শুরু হয়।