প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
![]() |
চট্টগ্রাম বন্দর ফটকের সামনে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে সমাবেশে নেতা–কর্মীরা। চট্টগ্রাম, ২৮ জুন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চট্টগ্রাম বন্দরকে রাষ্ট্রের মালিকানায় রেখে বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালনা করতে হবে। এই বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়া যাবে না। দেশবিরোধী ও সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে সরকার পিছু না হটলে ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান দিবসের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
দুই দিনব্যাপী রোডমার্চ শেষে চট্টগ্রাম বন্দর ফটকের সামনে আজ শনিবার সমাপনী সমাবেশে বক্তারা এই কথা বলেন।
দেশের বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী
দেশপ্রেমিক জনগণ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে গতকাল শুক্রবার সকালে
ঢাকা থেকে এই রোডমার্চ শুরু হয়। পথে পথে সমাবেশের পর আজ বিকেল পৌনে পাঁচটায়
রোডমার্চ চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় পৌঁছায়। এরপর সেখানে সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন
বলেন, ‘এক সেকেন্ড দেরি না করে ঘোষণা দিন, আমরা বন্দর লিজ (ইজরা) দেব না।
দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে রাষ্ট্রের মালিকানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে
দিয়ে পরিচালনা করব।’ তিনি বলেন, সরকার এখতিয়ার–বহির্ভূতভাবে এমন কতগুলো
কাজ শুরু করল, যা তাদের সংস্কারের আলোচনায় নেই।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ওই যে বন্দর ভবন দেখা যায়, আপনারা চট্টগ্রামের মানুষ, বন্দর কি সংস্কারে ছিল? না, এটা তো ছিল না। তাহলে বন্দর লিজের (ইজারা) কথা উঠল কেন? বন্দর কি লোকসানি প্রতিষ্ঠান? না, এটা তো লাভজনক প্রতিষ্ঠান।’
চট্টগ্রাম বন্দরে ১৭ বছর ধরে চালু থাকা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আওয়ামী লীগ আমলে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এগিয়ে এনেছে। আগামী নভেম্বরে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
এই টার্মিনালে বন্দরের টাকায় কেনা যন্ত্রপাতি থাকার পরও কেন বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
করিডর প্রসঙ্গে রুহিন হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমার-রোহিঙ্গায় ভুক্তভোগী চট্টগ্রামের জনগণ। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছিলেন, এখানে বহুপক্ষীয় সমাধান করতে হবে, ওনারা করলেন না। বরং নতুন করে কী বললেন? রাখাইনকে নাকি করিডর দেবেন, চ্যানেল দেবেন। আমরা বলছি, সেখানে যুদ্ধ চলছে, সেখানে করিডর দেওয়া মানে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা। এটা আমরা হতে দেব না।’
সমাবেশে বক্তারা বলেন, চারটা পয়েন্টে রোডমার্চ হলো। এখন সর্বশেষ পরিষ্কার বক্তব্য, সরকার গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে এসব দেশবিরোধী, সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে পিছু হটবে। না হলে ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান দিবসের পর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দেশবিরোধী ও সার্বভৌমত্ব–বিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড রুখে দেওয়া হবে।
যে চার প্রধান দাবিতে এই রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হয় তা হলো: চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দেওয়া, স্টারলিংক ও করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করা, আধিপত্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তি প্রকাশ করা এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করা।
রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এর মধ্যে রয়েছে ‘বন্দর-করিডর, বিদেশিদের দেব না’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘মার্কিন কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল কর’, ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, ‘মার্কিন ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ প্রভৃতি। চট্টগ্রামের সমাপনী সমাবেশে সহস্রাধিক নেতা–কর্মী অংশ নেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহার সভাপতিত্বে এবং বাসদের জেলা ইনচার্জ আল কাদেরি জয়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।
ঢাকা থেকে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এই রোডমার্চ শুক্রবার রাতে ফেনী পৌঁছায়। এরপর আজ শনিবার সকালে সেখানে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি মহীপাল হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। কর্মসূচির মূল স্লোগান ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’। ফেনী থেকে যাত্রা করে রোডমার্চ মিরসরাইয়ে এসে পরবর্তী সমাবেশ করে। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নম্বর ফটকে এসে রোডমার্চ শেষ হয়। এরপর সমাপনী সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।