নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় শুক্রবার যৌথবাহিনীর চেকপোস্টে মোটরসাইকেল চালকদের কাগজপত্র যাছাই করা হয়। ২১ মার্চ ২০২৫ | ফাইল ছবি

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে শুধু রাজধানীতেই ১৬৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের মামলার পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। একইসঙ্গে সারা দেশে খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৭টি। এই পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি খুন হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। 

পুলিশের হিসাব মতে, এই পাঁচ মাসে বিভিন্ন অপরাধে সারা দেশে মামলা হয়েছে ৭৬ হাজার ২২৭টি। এসব মামলার বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে খুন, ছিনতাই, অপহরণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন প্রেক্ষাপটে পুলিশকে প্রতিদিন আন্দোলন-বিক্ষোভ দমনসহ বহুমুখী কাজে যুক্ত করা হচ্ছে। অপরাধ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুরোপুরি কঠোর ও আরও সক্রিয়তা জরুরি। এদিকে, উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রগুলো বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। 

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে সারা দেশে জানুয়ারি মাসে খুনের মামলা হয়েছে ২৯৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০টি, মার্চে ৩১৬টি, এপ্রিলে ৩৩৬টি, মে মাসে ৩৪১টি। এই পাঁচ মাসে মোট মামলা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৭টি। এদিকে, ঢাকায় জানুয়ারি মাসে খুনের মামলা হয়েছে ৩৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৮টি, মার্চে ৩৩টি, এপ্রিলে ২৯টি ও মে মাসে ৩২টি। 

এদিকে, ২০২৪ সালে বিভিন্ন অপরাধে সারা দেশে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫টি। এ বছরে জানুয়ারি মাসে খুনের মামলা হয়েছে ২৩১টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৪০টি, মার্চে ২৩৯টি, এপ্রিলে ২৯৬টি, মে মাসে ২৫৯টি, জুন মাসে ২৬৮টি, জুলাইতে ৩৩৪টি, আগস্ট মাসে ৬২৬টি, সেপ্টেম্বরে ২৮৩টি, অক্টোবরে ২৪৯টি, নভেম্বরে ২১১টি, ডিসেম্বরে ২০৪টি। ওই বছরে মোট খুনের মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩২টি। 

পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে ডিএমপি’র ৫০টি থানায় বিভিন্ন অপরাধে জানুয়ারিতে ১ হাজার ৭৯১টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৫৬৬টি, মার্চে ১ হাজার ৭৫৪টি, এপ্রিলে ১ হাজার ৫৪৭টি ও মে মাসে ১ হাজার ৭৩৩টি মামলা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ঢাকায় খুনের ঘটনা ঘটে ৬৩টি, ২০২৩ সালে ৬০টি, ২০২২ সালে ৬৫টি, ২০২১ সালে ৭৪টি এবং ২০২০ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ৮০টি। 

এখন প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীতে কোনো না কোনো অপরাধের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় জনমনে। গত ১৩ই মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ এলাকায় দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) নিহত হন। তিনি ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। গত ২১শে এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মো. আরমান হোসেন (২২) নামের এক তরুণ নিহত হন। এদিকে, শুক্রবার রাতে মোহাম্মদপুরে দুর্গা মন্দির গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে মো. নূর ইসলাম (২৬) নামে এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ২৫শে মে দিবাগত রাতে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন গুদারাঘাট এলাকায় প্রকাশ্যে একের পর এক গুলি করে হত্যা করে গুলশান থানা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধনকে। 

মাস খুনের সংখ্যা
জানুয়ারি ২৯৪
ফেব্রুয়ারি ৩০০
মার্চ ৩১৬
এপ্রিল ৩৩৬
মে ৩৪১
মোট ১,৫৮৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক সাম্প্রতিক অপরাধ পরিসংখ্যান নিয়ে বলেন, 'বর্তমান সময়ে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী এবং শিশু নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধগুলো অনেক বেড়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অপরাধ দমাতে আরও কঠোর হতে হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।'

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, 'সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এটি সংখ্যায় কখনো কমে আবার কখনো বাড়ে। দেশে সকল অপরাধের মাত্রা কমাতে এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ তৎপর রয়েছে।'

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সংবাদ ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এই সংক্রান্ত অনেক মামলা হয়েছে। এমনকি এর আগের ঘটনাও আছে। যদি মামলার পরিসংখ্যান ধরি, তাহলে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলো কিন্তু খুব বেশি না। এখানে আগের বেশকিছু মামলা রয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তী সময়ে পুলিশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। অপরাধ দমন করতে গিয়ে অনেক সময় পুলিশ সদস্যরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। জুলাই-আগস্টের পরে যেমন পরিস্থিতি ছিল, সেটি বর্তমান সময়ে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।