প্রতিনিধি কুমিল্লা
![]() |
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরালটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কুমিল্লা শহরের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে স্থাপিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ম্যুরাল ভাঙার ছবি ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ম্যুরালটি দ্রুত পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ নারগিছ আক্তার বলেন, 'রফিকুল ইসলামের ভাগনে মেরাজ আহমেদ রাজ এ স্থাপনাটি নির্মাণে আর্থিক সহায়তা করেন। এরপর থেকে এটি আমরা দেখভাল করে আসছি। শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর এখানেই শ্রদ্ধা নিবেদন করে।'
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, 'রফিকুল ইসলামের অবদান জাতির ইতিহাসে অমূল্য। তাঁর নামে নির্মিত স্মারক ভাঙা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা জোর দাবি জানাই, দ্রুত এটি পুনঃস্থাপন করা হোক।'
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার বলেন, 'বিষয়টি আগে জানতাম না। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে ম্যুরালটি পুনঃস্থাপনসহ যা যা প্রয়োজন, সবই করা হবে।'
জানা গেছে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার পেছনে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন রফিকুল ইসলাম। ১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি
জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে এক চিঠিতে ২১ ফেব্রুয়ারিকে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এরপর তিনি
‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠন গড়ে
তুলেন এবং অন্যান্য দেশের সমর্থন আদায়ে কাজ শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায়
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ অবদানের জন্য তিনি ও তাঁর সংগঠন ২০০২ সালে একুশে
পদকে ভূষিত হন।
রফিকুল ইসলামের পরিবারের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের
তত্ত্বাবধানে ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের
পাশে শহীদ মিনার ও তাঁর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। তখন ম্যুরালটির উদ্বোধন
করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং রফিকুল ইসলামের স্ত্রী
বুলি ইসলাম।