প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

ঢাকা থেকে রোডমার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পর চলছে সমাবেশ। আজ বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

চার প্রধান দাবিতে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। আজ শনিবার বিকেল পৌনে পাঁচটায় বন্দরের ৪ নম্বর ফটকের সামনে পৌঁছানোর পর সেখানে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বক্তারা নিউমুরিং টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া চলবে না বলে বক্তব্য দিচ্ছেন।

দেশের বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে দুই দিনের এই রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। পথে পথে সমাবেশের পর আজ বন্দর এলাকায় পৌঁছায় রোডমার্চের বহর।

রোডমার্চ থেকে ‘চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দেওয়া, স্টারলিংক ও করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করা, আধিপত্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তি প্রকাশ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের’ দাবি জানানো হয়।

রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টেরিম সরকার, সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার’, ‘বন্দর-করিডর, বিদেশিদের দেব না’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল করো’, ‘মার্কিন, ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’—প্রভৃতি স্লোগান। সহস্রাধিক মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

এর আগে আজ সকালে ফেনীতে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) রোডমার্চ কর্মসূচির চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো নিউমুরিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া চলবে না, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা করতে হবে, রাখাইনে করিডর দেওয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে; স্টারলিংক, সমরাস্ত্র কারখানা, করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে, মার্কিন-ভারতসহ ‘সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী দেশগুলোর’ সঙ্গে বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি প্রকাশ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে।

রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের স্লোগানে মুখর সমাবেশস্থল। আজ বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

ফেনীতে রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করি, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা, আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষা। গণ-অভ্যুত্থানকে কোনোভাবে বিতর্কিত করা যাবে না। পাহাড়িদের ওপর নির্যাতন করা যাবে না, দেশে কোনোভাবে বৈষম্য তৈরি করা যাবে না, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। ইতিপূর্বে বিভিন্ন আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সব শহীদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এ আন্দোলন দীর্ঘদিনের।’

রুহিন হোসেন আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি, হৃৎপিণ্ড। আমরা আশা করব, বিগত সরকারের ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর ইজারা দেওয়াসহ যে কাজ করতে চাইছে, তা থেকে তারা পিছু হটবে। আর এটা নিয়ে আমাদের আজকের রোডমার্চের শেষে আর কোনো বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে হবে না। কিন্তু যদি সরকার এই দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে সমাপনী সমাবেশ থেকে আমরা ঘোষণা পাঠের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি দেব।’