প্রতিনিধি রাজশাহী

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) | ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে জেলার ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলামকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

১৮ জুন জেলা সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আট দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান সমন্বয়কারী পদত্যাগপত্র পাঠান। পরদিন গতকাল শুক্রবার আরেক নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

ইংরেজিতে লেখা পদত্যাগপত্রে জেলার প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল লেখেন, ‘যথাযথ শ্রদ্ধা এবং ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছি।’ তিনি লেখেন, ‘এনসিপির ব্যানারে দলের সেবা করা এবং দেশের উন্নতির জন্য কাজ করা আমার জন্য সম্মানের এবং সৌভাগ্যের। জেলা ইউনিটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে যে আস্থা, সমর্থন ও সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে ব্যক্তিগত কারণে আমি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে এই মুহূর্তে আমাকে আমার ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।’

জেলা এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমন্বয় কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। জেলা ও মহানগর সমন্বয় কমিটির মধ্যেও আছে দূরত্ব। এ কারণে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় রাজশাহীতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতা-কর্মীর সংকট দেখা দেয়। জেলা ও মহানগর কমিটিতে পদধারী নেতাই যেখানে ৪৩ জন, সেখানে ওই বিক্ষোভে অংশ নেন মাত্র ২৭ জন। জেলা ও মহানগরের ব্যানারে ওই কর্মসূচি ডাকা হলেও সেদিন নগরের বেশির ভাগ নেতাকে দেখা যায়নি। যদিও জেলার সঙ্গে দূরত্ব অস্বীকার করেছে নগর কমিটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে একটি রেস্তোরাঁয় বসেছিলেন জেলা কমিটির নেতারা। এ রেস্তোরাঁর মালিক পদত্যাগপত্র পাঠানো প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম। সেখানে তাঁর সামনেই ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমের বুকে লাথি মারেন। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছিলেন। এ ঘটনার পর আহত অবস্থায় ফিরোজ আলমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলামকে শুক্রবার সাময়িক অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। একই সঙ্গে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কেন তাঁকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, তা তিন কার্য দিবসের মধ্যে মধ্যে জানাতে বলা হয়।

শুক্রবার বিকেলে এক ভিডিও বার্তায় নাহিদুল ইসলাম নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘এনসিপির জেলা কমিটিতে কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি আছে, যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। এর কিছু তথ্য-প্রমাণ সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। তার কোনো সুরাহা না হওয়ায় এটি শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করার শামিল। রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার ধুম চলছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এনসিপিকে জেলায় অবাঞ্ছিত করা হবে।’

এর আগেই রাতে পদত্যাগপত্র পাঠান জেলার প্রধান সমন্বয়কারী। দলের ভেতর এমন বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে শুক্রবার রাজশাহীতে এসেছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন।

পদত্যাগের বিষয়ে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পদত্যাগপত্র কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা আমি জানি না। আমি কোনো দিন রাজনীতি করিনি। হঠাৎ করে এসে মনে হচ্ছে, এত বড় পদ আমার জন্য না। তবে আমি এখনো এনসিপির সঙ্গে আছি। এনসিপির ভালোটাই চাই। একান্তই ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।’

পদত্যাগের সঙ্গে বুধবার রাতের ঘটনার কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এটাই মূল কারণ নয়। তবে ঘটনাটি আমাকে পদত্যাগে প্রভাবিত করেছে।’

কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন  বলেন, ‘আমি রাজশাহী এসেছি। ইতিমধ্যে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। রাতেও বসব। সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি। রাজশাহীতে এনসিপির কার্যক্রম আছে, সবাই মিলেই কাজ করব। জেলার প্রধান সমন্বয়কারী পদত্যাগপত্র পাঠালেও সেটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি এখন বিবেচনাধীন আছে।’