প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

কনটেইনার ডিপো থেকে আসছে না মালামাল। বন্দর থেকেও খালাস হচ্ছে না পণ্য। এ অবস্থায় ফাঁকা পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নম্বর ফটক। অথচ স্বাভাবিক সময়ে পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায় এই ফটকে। আজ রোববার দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে এক দিনেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩ হাজার ৬৮০ একক কনটেইনার রপ্তানি হয়নি। এসব কনটেইনারের সিংহভাগই পোশাকশিল্পের। রপ্তানি না হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে এসব পণ্য সময়মতো পৌঁছানো যাবে না। বন্দরের ইতিহাসে এক দিনে এত বেশিসংখ্যক কনটেইনার রপ্তানি না হওয়ার নজির নেই বলে জানিয়েছে এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার বন্দর জেটিতে থাকা তিনটি জাহাজ রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাস্টমসের কর্মসূচির কারণে গতকাল শনিবার ও আজ কোনো কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠানো যায়নি। কর্মসূচির আগে কিছুসংখ্যক কনটেইনার জাহাজে তোলা হলেও বুকিং অনুযায়ী সব কনটেইনার না আসায় তিনটি জাহাজ বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি।

এই তিন জাহাজের একটি ‘এএস সিসিলিয়া’। এই জাহাজ ৫৬৪ একক কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে এসব কনটেইনার ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা। একইভাবে ‘এক্সপ্রেস নিলওয়ালা’ নামে আরেকটি জাহাজে রপ্তানির কথা ছিল ১ হাজার ৪৬০ একক কনটেইনার। ‘হং ডা জিন-৬৮’ নামের অন্য জাহাজটিতে ১ হাজার ৬৬৬ একক কনটেইনার রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। রপ্তানি কনটেইনার না পেয়ে তিন জাহাজই এখন জেটিতে অলস বসে আছে।

ডিপোতে প্রতিদিনই রপ্তানি পণ্যের স্তূপ বাড়ছে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা না আসায় শুল্কায়ন কার্যক্রম হচ্ছে না। তাতে কোনো কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না।

— রুহুল আমিন সিকদার, মহাসচিব, বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতি।

‘এএস সিসিলিয়া’ জাহাজটি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জাহাজ কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ডিপো থেকে রপ্তানি কনটেইনার আসতে না পারায় জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি। এই জাহাজের কনটেইনারগুলো সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় কনটেইনার জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা। এখন সময়মতো ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় কনটেইনার জাহাজে তুলে দেওয়া যাচ্ছে না।

শিপিং কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি পণ্য প্রথমে কারখানা থেকে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে আনা হয়। সেখানে শুল্কায়নের পর কনটেইনারে ভরা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে বুকিং অনুযায়ী বন্দরে এনে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ডিপোতে প্রতিদিনই রপ্তানি পণ্যের স্তূপ বাড়ছে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা না আসায় শুল্কায়ন কার্যক্রম হচ্ছে না। তাতে কোনো কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না।

এনবিআরের সংস্কারে সরকারের নেওয়া উদ্যোগকে কেন্দ্র করে সংস্থাটিতে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ গঠনের কথা জানিয়ে সরকার গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে।

কর্মকর্তারা কার্যালয়ে নেই। অনেক কক্ষে লাগানো রয়েছে তালা। আজ সকালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

 এরপর সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের সংস্কার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে গতকাল থেকে সারা দেশের শুল্ক–কর কার্যালয়ে শুরু হয় লাগাতার শাটডাউন কর্মসূচি। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কারণ, বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নকারী চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দেশের সবচেয়ে বড় স্টেশন। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগ এই বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া হয়।

রপ্তানির মতো আমদানিতেও অচলাবস্থা চলছে। বন্দর চত্বর থেকে কোনো কনটেইনার খালাস হচ্ছে না। আবার বন্দর জলসীমায় যেসব জাহাজ এসে নোঙর করছে, সেগুলোর নিবন্ধন হয়নি। ফলে এসব জাহাজ থেকে আমদানি কনটেইনার খালাস করা যাবে না, আবার রপ্তানি কনটেইনারও বোঝাই করা যাবে না।

জানতে চাইলে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, কাস্টমসের কর্মসূচির কারণে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে। নতুন করে কোনো কনটেইনার খালাস হয়নি। রপ্তানি কনটেইনারও ডিপো থেকে আসেনি। কারণ, আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন কার্যক্রম করে কাস্টমস।