[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

এক জোড়া দিয়ে শুরু, এখন ৭০০ পাখির এক খামারে সাবলম্বী দম্পতি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি জামালপুর

জামালপুরে শখের এক জোড়া পাখি থেকে ভাগ্য বদল হয়েছে সালমা সুলতানা ও লোমান রেজা দম্পতির। সম্প্রতি সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের সুলতান নগর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এক জোড়া দিয়ে শুরু, এখন ৭০০ পাখির এক খামারে সাবলম্বী দম্পশখ করে এক জোড়া পাখি কেনা থেকে শুরু। সেখান থেকেই ভাগ্য বদলেছে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার সুলতান নগর গ্রামের সালমা সুলতানা ও লোমান রেজা দম্পতির। এখন তাঁদের খামারে আছে ২৫ প্রজাতির প্রায় ৭০০ পাখি। এই খামার থেকেই সংসারের অভাব দূর করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। গড়ে তুলেছেন গরুর খামার, ফলের বাগান, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ও দুই তলা বাড়ি।

জামালপুর সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বামুনজী বিলের পাশের গ্রাম সুলতান নগরে এই দম্পতির বাড়ি। গ্রামে ‘পাখির খামার’ বললেই সবাই সালমা ও লোমানকে চেনেন। অনেকে সালমাকে ‘পাখির মা’ বলেও ডাকেন। বাড়িতে ঢোকার পর চোখে পড়ে ফলের বাগান, পাশে গরুর খামার। বাড়ির দ্বিতীয় তলায় আছে পাখির খামার। সম্প্রতি নিচতলা থেকে খামারটি সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে।

খামারে লাভবার্ড, বাজেরিগার, টিয়া, গিরিবাজ, ককটেল, নাইটিঙ্গেল, জেব্রা ফিঞ্চ, কবুতরসহ বর্তমানে আছে ২৫ প্রজাতির পাখি। আগে এই সংখ্যা ছিল ৪০ প্রজাতির এবং প্রায় তিন হাজার পাখি।

খামার দেখতে দেখতে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প শোনালেন এই দম্পতি। সালমা ও লোমান বলেন, বেকারত্বে হতাশ হয়ে ২০১২ সালে লোমান বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন। চার বছর পর ফিরে এসে শখের বসে এক জোড়া পাখি পালতে শুরু করেন। সেই এক জোড়া পাখি থেকেই গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক খামার। ইউটিউব দেখে শিখেছেন পাখি পালনের কৌশল। মাস শেষে খরচ বাদে আয় হয় প্রায় এক থেকে দুই লাখ টাকা।
বর্তমানে খামারে আছে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা দামের জোড়া জাপানি বাজেরিগার, ৬০ হাজার টাকার কবুতর এবং সর্বনিম্ন এক হাজার টাকার লাভবার্ড। খামারের আয় দিয়েই দুই তলা বাড়ি করেছেন, যার নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। বাড়ির পাশে ২২ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন ফলের বাগান। এ ছাড়া জামালপুর শহরের দিগপাইত এলাকায় দুটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসাতেও যুক্ত হয়েছেন।

সালমা সুলতানা ও লোমান রেজা দম্পতির খামারের পাখি। সম্প্রতি জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের সুলতান নগর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

লোমান বলেন, ‘স্ত্রী শখ করে এক জোড়া পাখি পালতে শুরু করেন। পরে তাঁর পরামর্শে পাখি লালনপালনের চিন্তা আসে। ইউটিউব দেখে শিখে দুজনে মিলে খামার গড়ে তুলি। এরপর ধীরে ধীরে পাখি বিক্রি শুরু করি। এভাবেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’ তিনি বলেন, শুরুটা সহজ ছিল না। খামার তৈরির শুরুর দিকে এক রাতে বেশ কিছু পাখি ও কবুতর চুরি হয়। এতে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়। পরে ২০১৮ সালে শীতে মারা যায় প্রায় ৩০০ পাখি, ক্ষতি হয় তিন লাখ টাকার মতো। তবে এসব ধাক্কা সামলে আবার ঘুরে দাঁড়ান তাঁরা।

পাখিদের রোগবালাই নিয়ে লোমান বলেন, শীতকালে রানিক্ষেত রোগে পাখি বেশি আক্রান্ত হয়। তখন অনলাইনে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। প্রতিদিন পাখিদের জন্য ৪০ কেজির মতো খাবার লাগে, যার ব্যয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। খাবার আসে জামালপুর, টাঙ্গাইলের মধুপুর ও রংপুর থেকে। পাখি বিক্রি করেন অনলাইনে ও খামার থেকেই। সারা দেশেই তাঁর ক্রেতা আছে।

এই দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। দুই ছেলে পড়ছে স্থানীয় স্কুলে।

সালমা সুলতানা বলেন, ‘পথটা সহজ ছিল না। পরিশ্রম ও সততা আমাদের ভাগ্যবদল করেছে। আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে অনেক ঝড় এসেছে। কিন্তু আমরা পরিশ্রম করে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এখনো আমরা দুজনেই খামারের সব কাজ করি। পরিশ্রম করলে যেকোনো কাজে সফলতা আসবেই।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন