প্রতিনিধি পাবনা

পাবনার আটঘরিয়া ফায়ার সার্ভিসের লিডার মোস্তাফিজুর রহমান (বাঁয়ে) | ছবি: ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিও থেকে নেওয়া

পাবনার আটঘরিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা কার্যালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগুন নেভাতে গিয়ে সেখানে কোনো কোরআন শরিফ বা ধর্মীয় গ্রন্থের অস্তিত্ব পাননি বলে দাবি করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁদের ভাষ্য, পরদিন সকাল পর্যন্তও নতুন করে কোনো অগ্নিকাণ্ডের খবর মেলেনি।

রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিও বার্তায় আটঘরিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লিডার মোস্তাফিজুর রহমান এসব কথা জানান।

ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘১৫ মে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছি। গিয়ে দেখি ভবনের দোতলায় দুটি কক্ষে কিছু চেয়ার-টেবিলের ওপর আগুন জ্বলছে। প্রচণ্ড ধোঁয়ার মধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। পুরো কাজে ৫ মিনিটের মতো সময় লেগেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি, কারণ এটি একটি রাজনৈতিক সহিংসতার অংশ ছিল। আগুন নেভানোর সময় বা পরে কোথাও স্তূপ করে রাখা কোরআন শরিফ বা অন্য কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ আমরা দেখিনি। পরদিন সকাল পর্যন্ত নতুন করে কোনো আগুন লাগার খবরও পাইনি।’

এদিকে আটঘরিয়ায় জামায়াত-সংশ্লিষ্ট কোনো ইমাম বা মুয়াজ্জিন মসজিদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও দলটির জেলা কমিটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। শনিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর দেওয়া বক্তব্যের একটি ১১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমি তার সঙ্গে শতভাগ একমত। আজ স্পষ্ট করে বলছি, এখন থেকে আটঘরিয়ায় জামায়াতপন্থী কোনো মুয়াজ্জিন আজান দিতে পারবেন না, কোনো ইমাম নামাজ পড়াতে পারবেন না। আগামী জুমায় প্রতিটি মসজিদে এর প্রতিবাদ জানাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতের লোকজন মিথ্যা বলেন, তাদের পেছনে নামাজ হয় না। তারা এতটাই মুনাফেক যে দেবোত্তর বাজার মসজিদে তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। ইমাম ও মুয়াজ্জিন চলে যাওয়ায় গতকাল জুমার নামাজ মাঠে আদায় করতে হয়েছে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মসজিদ খোলা হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল বলেন, ‘জামায়াতের অফিসে আগুন লাগেনি, এ সংক্রান্ত তথ্য মিথ্যা। বলা হচ্ছে, কোরআন শরিফ ছিল না—এটাও মিথ্যা। ফায়ার সার্ভিসের লিডার মোস্তাফিজকে চাপ দিয়ে এসব বলানো হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চাপেই তিনি এখন বিপাকে পড়েছেন। তাঁকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। কথা বলার সুযোগ পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যেত।’

এই ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—জামায়াতের কার্যালয়ে আসলে কী হয়েছিল? সেখানে কোরআন শরিফ থাকলে, তা পুড়ল কীভাবে? আগুন যদি সত্যিই লেগে থাকে, তাহলে তার উৎস কোথায়? বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য পদ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষ একে অপরের ওপর হামলা, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে।