প্রতিনিধি ভোলা
![]() |
ঝড়ে বিধ্বস্ত নৌকা মেরামতের চেষ্টা করছেন এক জেলে। আজ শুক্রবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার উত্তর ইলিশার চড়ার মাথা মাছঘাট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ও রাজাপুর ইউনিয়নে কালবৈশাখীতে জেলেদের ৫০টি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে ৯ বছরের এক শিশু নৌকার ইঞ্জিনের ওপর পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঝড়ে ইলিশার মাছঘাট, লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট এলাকার ১৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কালবৈশাখী আঘাত হানে। প্রায় আধা ঘণ্টা ঝোড়ো বাতাস বয়ে যায়। আরও কিছুক্ষণ বৃষ্টি হয়।
আজ শুক্রবার সকালে রাজাপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, অনেক গাছপালা ভেঙে গেছে। ইউনিয়নের মিজিবাজার এলাকায় আবদুর রাজ্জাক মৌলভী জামে মসজিদের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে কালবৈশাখী।
ইউনিয়নের জোড়খাল এলাকার জেলে আবুল কালাম (৫০) জানান, মেঘনা নদীতে মাছ ধরে ফিরে আসার সময় ঝড়ে তাঁর নৌকা উল্টে যায়, তখন তাঁর ৩০ হাজার টাকার জাল ভেসে গেছে। তাঁরা ভাসতে ভাসতে নদীতীরে আসেন। তীর থেকে অন্য নৌকার সাহায্যে নৌকা উদ্ধার করেন। তবে জাল পাননি।
একই এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে সোনাই মাঝির (২৫) নৌকা-জাল সব ডুবে গেছে। এতে তাঁর ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই ইউনিয়নের কন্দ্রকপুর এলাকার আবদুস শহীদ বেপারীর (৪৫) জাল-নৌকা ডুবে গেছে। ঝড়ে ব্লকের সঙ্গে পিটিয়ে ফারুক মাঝির (২৬) ১ লাখ ২০ হাজার টাকার নৌকা ভেঙে গুঁড়া হয়েছে বলে জানান।
স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজাপুর এলাকার ২০টি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জেলে।
![]() |
ঝড়ে দোকানঘর ভেঙে গেছে। আজ শুক্রবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার তালতলী মাছঘাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজাপুর ইউনিয়নের জোড়খাল এলাকার বাসিন্দা বেল্লাল সরদারের সঙ্গে নৌকায় মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে মো. শিপন (৯)। ঝড়ে নৌকার ইঞ্জিনের ওপর পড়ে শিপন গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেল্লাল সরদার মুঠোফোনে বলেন, গতকাল বিকেল চারটার দিকে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান। সাড়ে চারটার দিকে ঝড় শুরু হয়। তীব্র বাতাসে শিপন নৌকার ইঞ্জিনের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে। তার পেটে লোহা ঢুকে যায়। তাকে প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতালে, পরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
ইলিশা ইউনিয়নের চডারমাথা মাছঘাট, বিশ্বরোডের মাথা ও তালতলী মাছঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নদীতীরের দোকানঘর, নৌকা ও স্পিডবোট দুমড়েমুচড়ে ভেঙে পড়ে আছে। এমন একটি নৌকার মালিক ইলিশা ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামের জাফর মাঝি (৪১) বলেন, তাঁর প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে তাঁর নৌকা গড়ার সামর্থ্য নেই। গত দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) বেকার ছিলেন। এ নৌকার সঙ্গে ছয়টি পরিবার জড়িত। এখন সবার পরিবারের সদস্যদের অনাহারে দিন কাটাতে হবে। নইলে ঋণ করে চলতে হবে।
ঝড়ের কবলে পড়ে সুজন মাঝির যাত্রীবাহী স্পিডবোট ভেঙে দুমড়েমুচড়ে গেছে। এ স্পিডবোট ঝড়ের কবল থেকে বাঁচাতে সুজনের হাত ভেঙে গেছে। ইলিশা ফেরিঘাট এলাকায় ব্লক বাঁধের ওপর তাঁর স্পিডবোট ভেঙে পড়ে আছে। তিনি ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া মঞ্জু মিজির একটি স্পিডবোট ভেঙে দুমড়েমুচড়ে গেছে।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইলিশা ইউনিয়নের ৩০টি নৌকা ভেঙে দুমড়েমুচড়ে গেছে। অনেকে নৌকা বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন। অনেকের জাল-নৌকা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এলাকায় কোনো খাল নেই। নৌকা নদীর তীরে ব্লকের সঙ্গে, ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটের পন্টুনের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। ঝড়ের দাপটে নৌকা ভেঙে ক্ষতি হয়েছে।
![]() |
ঝড়ে নৌকার পাশাপাশি স্পিডবোটও ভেঙে গেছে। আজ শুক্রবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ফেরিঘাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত জেলে নৌকার তালিকা করছেন। তবে সরকার আহত জেলেদের সাহায্য করলেও ক্ষতিগ্রস্ত নৌকার জন্য কোনো সাহায্য দেবে না।
জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের তাঁরা ত্রাণ তহবিল থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ জন্য তালিকা করতে বলা হয়েছে। তবে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।