নওগাঁয় আম পাড়া উৎসব শুরু, এখনো জমেনি আমের হাট
প্রতিনিধি নওগাঁ
![]() |
গুটি জাতের আম কিনেছেন রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁর সাপাহার আম হাটের গোডাউনপাড়ায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আম পাড়ার সময়সূচি নির্ধারিত ছিল নওগাঁয়। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে গুটি আম পাড়া যাবে। সে অনুযায়ী আজ থেকে নওগাঁর কিছু কিছু বাগানে গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে। তবে শুরুর দিনটা তেমন জমেনি নওগাঁর আমের হাটগুলোয়।
নওগাঁ শহরের পৌর কাঁচাবাজার–সংলগ্ন পাইকারি আমের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে তেমন ভিড় নেই। নেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। সকাল ৯টা পর্যন্ত আম বিক্রির পরিমাণ মাত্র কয়েক মণ।
জান্নাত ফল ভান্ডারের মালিক মারুফ হোসেন বলেন, নওগাঁর বাণিজ্যিক বাগানগুলোয় এখনো আম পাড়া শুরু হয়নি। বাসাবাড়ির আশপাশে চাষ হওয়া বিভিন্ন জাতের গুটিজাতের আম পাকতে শুরু হয়েছে। ওই সব চাষি বিক্রি করতে আনছেন, তবে পরিমাণে খুব কম। গুটি আম ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। নওগাঁতে ভালো জাতের সুমিষ্ট আম এখনো পাড়া শুরু হয়নি। তবে সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় গোপালভোগ ও হিমসাগর আম পাড়া শুরু হয়েছে। ওই সব এলাকার আম নওগাঁর বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার আমের হাট। বেলা ১১টার দিকে সাপাহার আমের হাটে গিয়ে দেখা যায়, আম বেচাকেনা তেমন জমেনি। আড়তে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। দু-একজন করে আম বিক্রেতা সাইকেল ও ভ্যানে করে আম বিক্রি করতে আসছেন। প্রথম দিনেই ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এ কারণে আমচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নওগাঁ শহরের পৌর কাঁচাবাজার–সংলগ্ন পাইকারি আমের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে তেমন ভিড় নেই। নেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। সকাল ৯টা পর্যন্ত আম বিক্রির পরিমাণ মাত্র কয়েক মণ।
সাপাহার আমের হাটের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, নওগাঁয় আগাম জাতের গুটি জাতের আম, গোপালভোগ ও হিমসাগর তেমন চাষ হয় না। বাণিজ্যিক বাগানগুলোতে নাক ফজলি, আম্রপালি, বারি আম-৪, হাঁড়িভাঙা ও গৌড়মতি আম বেশি চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় আম্রপালি। জেলায় যে পরিমাণ আম চাষ হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশই আম্র্রপালি। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী, এই আম বাজারে আসবে আগামী ১৮ জুন থেকে। আম্রপালি বাজারে আসা শুরু করলে সাপাহার আমের হাট জমজমাট হবে। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে নাক ফজলি, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসবে, তখন হাট ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠবে।
৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম কেনার বিষয়ে ইমাম হোসেন বলেন, আম একটা কাঁচা পণ্য। এই ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আম বেচাকেনার ক্ষেত্রে ঢলতা প্রথা চলে আসছে। এবার আম ব্যবসায়ী ও আমচাষিদের সঙ্গে সভা করে প্রশাসন ক্যারেটসহ ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম বেচাকেনার নির্দেশনা দিয়েছে। ৪৮ কেজির মধ্যে ক্যারেটের ওজন ৩ কেজি। সে হিসাবে ঢলতা নেওয়া হচ্ছে ৫ কেজি করে।
![]() |
গাছ থেকে গুটি জাতের আম নামাচ্ছেন এক চাষি। আজ বৃহস্পতিবার নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তিলনা এলাকার একটি বাগানে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সাপাহার ছাড়াও পোরশার মিনাবাজার, নোচনাহার ও বদলগাছী সদরে আমের হাট বসে। এসব হাট এখনো জমেনি।
১২ মে নওগাঁ জেলার আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেই ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, আজ থেকে গুটিজাতের আম এল বাজারে। ২৮ মে থেকে গোপালভোগ ও আগামী ২ জুন থেকে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর আম বাজারে আসবে। জিআই পণ্য স্বীকৃতি পাওয়া ‘নওগাঁর নাক ফজলি’ আম সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা, ১৮ জুন আম্র্রপালি, ২৫ জুন ফজলি ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো এবং ১০ জুলাই থেকে বারি আম-৪, গৌড়মতি, আশ্বিনা ও কাটিমন আম সংগ্রহ করা যাবে।
জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে নাক ফজলি, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসবে, তখন হাট ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠবে।
— ইমাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক, সাপাহার আমের হাটের আড়তদার সমিতি ।
জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে কোনোভাবেই অপরিপক্ব আম সংগ্রহ কিংবা বাজারে তোলা যাবে না। তবে সময়ের আগে আবহাওয়ার কারণে আম পরিপক্ব হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমচাষিরা তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে সময়ের আগে আম সংগ্রহ করতে পারবেন। আম পাকানো ও সংরক্ষণ বা বাজারজাতে কোনো রাসায়নিক মেশানো যাবে না। আমে ভেজাল ঠেকাতে পরিবহনের আগে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার উপজেলা সদর বাজার, পোরশার নোচনাহার, সারাইগাছিসহ বিভিন্ন বাজারে বিশেষ নজরদারি রাখবে প্রশাসন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন