প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে গতকাল বুধবার কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে ১২ জন নেতা–কর্মীকে আহত করার ঘটনায় ছাত্র শিবিরের নেতা–কর্মীদের দায়ী করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটায় নগরের লাভলেইন এলাকায় মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নারী কর্মীদের লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত শিবির কর্মীদের গ্রেপ্তার ও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি রিপা মজুমদার, বিপ্লবী ছাত্র যুবা আন্দোলন নগর কমিটির সহসভাপতি ঈশা দে, ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি তৌকির আহমেদ, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদক অংহ্লাসিং মারমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহসভাপতি পুষ্পিতা নাথ।
লিখিত বক্তব্যে এ্যানি চৌধুরী বলেন, ‘চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারকে ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে শিবির দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতেই জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। নারী কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করে।’
হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত আবরার হোসাইন, আকাশ চৌধুরী, তৌকির, আসফারসহ কয়েকজন এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রশিবির ন্যক্কারজনক হামলার মাধ্যমে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করেছে।
এ টি এম আজহারের রায় প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, এ টি এম আজহারের বিচারপ্রক্রিয়াটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। এর মাধ্যমে আদালতের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিচারব্যবস্থা যে আওয়ামী আমলের মতো এখনো পুরোমাত্রায় রাজনৈতিক প্রভাবাধীন তা-ই প্রমাণিত হলো। আওয়ামী লীগ আমলে ঘোষিত আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকলে নতুন করে শুনানি শুরু করা যেত। অথচ তা না করে রিভিউ শুনানির রায়ে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হলো।
গতকাল গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হন। নগরের জামালখানের চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্র জোটের ব্যানার কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে এই হামলা চালানো হয়। এতে ছাত্রশিবিরের কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে।
তবে ঘটনাস্থলে শিবিরের কেউ ছিলেন না বলে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার শিবিরের সভাপতি মো. তানজীর হোসেন ও সেক্রেটারি মুমিনুল হক। শিবিরের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, আকাশ চৌধুরী বর্তমানে শিবিরের দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই। শিবিরের কোনো কর্মী এ ধরনের কাজে জড়িত নন।
হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁদের মুক্তির দাবিতে এদিন এশার নামাজের পর কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতা-কর্মীরা। তবে ব্যানারে তাঁদের নাম ইংরেজিতে ‘অ্যান্টি-শাহবাগ মুভমেন্ট’ লেখা ছিল। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।