প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
![]() |
রাস্তার দুই পাশে ফুটেছে নানা ফুল। সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকেরা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সবুজ চা–বাগানের মাঝখান দিয়ে চলেছে সড়ক। সড়কের দুই পাশ যেন এক ফুলেল স্বপ্নপুরী। কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙা রং, জারুলের নীল-বেগুনি ছায়া আর সোনালুর ঝুলন্ত হলুদ আভা মিলেমিশে তৈরি করেছে অপূর্ব মেলবন্ধন। ফুলে ফুলে সেজে ওঠা প্রকৃতির এই ক্যানভাসে কেউ ছবি তুলছেন, কেউ দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, রাধাচূড়া ও সোনালু ফুল। প্রথম দিকে শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ফুল আর রাস্তা তাঁদের ক্যামেরায় ধারণ করে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর পর থেকে শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এই রাস্তার ছবি তুলতে এখন ভিড় করছেন সবাই। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জায়গাটি।
গত শনিবার বিকেলে এই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড়। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন তাঁরা। সেখানে দেখা যায় পর্যটকদেরও।
![]() |
প্রায় ১০ বছর আগে রাস্তার দুই পাশে নানা ফুলের গাছ লাগান ফিনলে টির ভাড়াউড়া ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক গোলাম মোহাম্মদ শিবলী। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চট্টগ্রাম থেকে পরিবারের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে আসা পর্যটক বিউটি আক্তার বলেন, ‘রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে আছে। খুবই ভালো লাগছে দেখে। অনেকগুলো ছবি তুললাম। ভিডিও করলাম। শ্রীমঙ্গলে এসে চা–বাগান দেখে যতটা আনন্দ পেয়েছি, এই রাস্তার এসে আরও আনন্দ পেলাম। সব মিলিয়ে খুবই ভালো লেগেছে এখানে এসে।’
একরামুল হোসেন নামের স্থানীয় একজন বলেন, কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে ঢুকলেই শুধু এই জায়গার ছবি দেখতে পান। সবাই এখানে এসেছেন। আজ তিনি পরিবার নিয়ে এসেছেন। এই জায়গাটি ছবির থেকেও সুন্দর। তবে এই রাস্তায় অনেক যানবাহন ও দ্রুতগতির মোটরসাইকেল চলছে। সেটি যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এখানে যানবাহনের গতি কমানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভোরের আলো ফোটা থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শত শত তরুণ-তরুণী ছুটে আসছেন এই রঙিন প্রান্তরে। কেউ দাঁড়াচ্ছেন ফুলগাছের ছায়ায়, কেউবা মুঠোফোনের ক্যামেরার লেন্সে বন্দী করছেন ফুলের সৌন্দর্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এই সৌন্দর্যের ঝলক। ভাইরাল হয়ে উঠেছে রাস্তার প্রতিটি কোণ, প্রতিটি দৃশ্য। এ যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা এক জীবন্ত ক্যানভাস।
![]() |
স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জায়গাটি। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের দুই পাশে ফিনলে টি–এর চা–বাগান। প্রায় ১০ বছর আগে ফিনলে ভাড়াউড়া ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক গোলাম মোহাম্মদ শিবলী নিজ উদ্যোগে রাস্তার দুই পাশে নানা ফুলের গাছ লাগান। এই গাছগুলোতে এখন ফুল ফুটছে।
গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর আগে আমি বধ্যভূমি ৭১ প্রাঙ্গণে ফুলের গাছ লাগাই। পরের ভানুগাছ সড়কের রাস্তার দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল, সোনালু ইত্যাদি গাছ লাগাই। এখন সেই গাছগুলোতে ফুল ফুটেছে। কত মানুষ আসছে। সবার কাছেই এই জায়গা এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমার কাজ সার্থক হয়েছে।’
![]() |
প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করেন সড়কটিতে। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম বলেন, এই রাস্তাটি এখন ভাইরাল হয়ে গেছে। জেলার বাইরে থেকেও অনেকে আসছে এখানে ছবি তোলার জন্য। শ্রীমঙ্গলের পর্যটনে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে এই ফুলের গাছগুলো। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন। বাইকারদের কাছেও এটি খুবই আকর্ষণীয় হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে আসা পর্যটকেরাও একবার হলেও যাচ্ছেন এখানে।
রাসেল আলম বলেন, এখন কিছুটা সমস্যাও তৈরি হয়েছে। এটি যেহেতু ব্যস্ততম সড়ক, প্রচুর যানবাহন চলাচল করে, অনেকেই রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়। এখানে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।