প্রতিনিধি নোয়াখালী
![]() |
বাড়ির সামনে কাচ ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে তিনটি গাড়ি। আজ রোববার সকালে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নোয়াখালীতে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ওরফে পিন্টুর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৭০-৮০টি মোটরসাইকেলে একদল তরুণ এসে শহরের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে অবস্থিত বাড়িটিতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ আত্মগোপনে রয়েছেন। বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে। এ ছাড়া চারতলা বাড়িটিতে সাতটি পরিবার ভাড়া থাকে। আজ রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে কাচ ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে তিনটি গাড়ি। নিচতলার বসার ঘরে দেয়ালে আগুনের পোড়া দাগ। দুটি ফ্রিজ, টেলিভিশনসহ আসবাব ভাঙাচোরা অবস্থায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় তলার একটি বসার ঘর ও দুটি শোবার ঘরেও ভাঙা আসবাব ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নিচতলায় ভাড়ায় থাকা একটি পরিবারের বিভিন্ন কক্ষেও ভাঙচুর করা হয়েছে।
সরেজমিনে আবদুল ওয়াদুদের স্ত্রী সাবরিনা মাহজাবিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে একদল লোক তাঁর বাড়ির ভেতর ঢুকে। তারা এসেই আগে সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙে ফেলে। এরপর প্রথমে ভবনের সামনের সব জানালা ভাঙচুর করে। পরে অনবরত লাথি দিয়ে দরজা খুলে ফেলে বাসার ভেতর ঢুকে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় নির্বিচারে ভাঙচুর চালায়।
সাবরিনা মাহজাবিন বলেন, ‘হামলা-ভাঙচুরের সময় দুই মেয়েকে নিয়ে একটি কক্ষের ভেতর ঢুকে কোনোরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। হামলাকারী গাড়ি, আসবাবসহ ঘরে ব্যাপক ভাঙচুরের মাধ্যমে প্রায় আধা ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়েছে। এরপর নিচতলায় থাকা সোফায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে গেছে। তারা যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নিভিয়েছেন।’ ঘটনার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পৃথক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে বলে জানান সাবরিনা।
আত্মগোপনে থাকা আবদুল ওয়াদুদ হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে বলেন, এভাবে কারও বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের রাজনীতি তিনি কখনো করেননি। ঘরের ভেতর আগুন দেওয়ায় তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের জীবন শঙ্কায় ছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর পরিবার আইনের আশ্রয় নেবে।
![]() |
ভাঙা অবস্থায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে আসবাব | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, রাতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর ছাত্র-জনতা শহরে আনন্দমিছিল করেছেন। একই সময় অন্য একটি অংশ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াদুদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান। হামলাকারীরা বাড়ির নিচতলায় সোফায় আগুন দিয়েছিলেন। তবে সেটি বাড়ির লোকজন নিভিয়ে ফেলেন। ওসি বলেন, ঘটনার বিষয়ে কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তাঁরা শহরে আনন্দমিছিল করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াদুদের বাড়িতে হামলার ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কেউ জড়িত নন।