প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
![]() |
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চার দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী ধ্রুবজিৎ কর্মকারের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের একাডেমিক কম্বাইন্ড সিস্টেম বাতিলসহ চার দফা দাবিতে একাডেমিক কার্যক্রম এবং সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিক্ষোভ হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কলেজ এলাকা ও রহমতপুর বাইপাস এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘শিক্ষার নামে প্রহসন চলবে না’, ‘কম্বাইন্ড সিস্টেম বাতিল করতে হবে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর ধ্রুবজিৎ’। এ সময় এক শিক্ষার্থী নিজের মুখ ও মাথা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে গলায় প্রতীকী রশি লাগিয়ে বুকে লিখে রাখে, ‘ধ্রুবজিৎ কর্মকার, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ পরীক্ষা ও পাঠ কার্যক্রম বর্জন করেছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেব না। আজ বিক্ষোভের পাশাপাশি শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ধ্রুবজিৎ স্মরণে সন্ধ্যায় কলেজ ক্যাম্পাসে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হবে।’
এর আগে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় কলেজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে চার দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো একাডেমিক কম্বাইন্ড সিস্টেম বাতিল করতে হবে। আগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পরিচালিত একাডেমিক সিস্টেমে ফিরে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা সাপেক্ষে সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের জন্য সুনির্দিষ্ট একাডেমিক নীতিমালা প্রকাশ করতে হবে এবং যেকোনো ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য প্রকাশ করতে হবে। যেকোনো নিয়মনীতি প্রণয়নের আগে নীতিমালা বোর্ডে সরাসরি সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের প্রশাসনের পক্ষে শিক্ষক এবং ছাত্র প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসমূহে হেলথ সেন্টার ও সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এসব দাবি মানার আগপর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম ও ক্যাম্পাসের সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ধ্রুবজিৎ কর্মকার (২৩)। তিনি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মনোতোষ কর্মকার ও সুপ্তি কর্মকারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট। গত রোববার দুপুরে কলেজের আবাসিক অমর একুশে হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করে এ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।
এদিকে গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত পত্রে জানানো হয়, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী ধ্রুবজিৎ কর্মকারের আত্মহত্যার কারণে চলমান পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীর আত্মার শান্তি কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ/ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে চলতি সপ্তাহে (২০, ২১ ও ২২ মে ২০২৫ তারিখ) অনুষ্ঠেয় সব পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। আগামী সপ্তাহের চলমান পরীক্ষাসমূহ পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর পরিবর্তিত তারিখ যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে।
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে আমাদের কার্যক্রম চলছে।’