প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
![]() |
জলাভূমির ফুল হিজল ফুটে আছে মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট রোডে জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’—এ রকম বললেই কি কোথাও ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়? এ রকম ফুলের গন্ধ এখন মৌলভীবাজার পৌরসভা কার্যালয় প্রাঙ্গণ ধরে হাঁটতে গেলে অনেকেই টের পেয়ে থাকেন। কার্যালয় ভবনের পশ্চিমের বারান্দা ছুঁয়ে দাঁড়ানো দুটি কাঁঠালচাঁপাগাছ আছে, তাতে সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দেওয়া সোনালি ফুল ফুটেছে। সেই ফুলের গন্ধই ছড়িয়ে পড়ছে গাছের নিচে, আশপাশে।
এ রকম ফুলের গন্ধ আছে শহরের কোর্ট রোডের সার্কিট হাউস এলাকাতেও। ওখানেও দু-একটি গাছে ফুটেছে কাঁঠালচাঁপা ফুল, সেই গন্ধ এখন সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় পাওয়া যায়।
শুধু ওই কাঁঠালচাঁপাই নয়, গন্ধ নেই তবু অমন অনেক ফুল ফুটেছে মৌলভীবাজার শহরে। এই ফুলেরা গাছের শাখা-প্রশাখায় দিনভর হাসছে। ‘মোর পথিকেরে’—এ রকম কথায়, সুরে যেন তারা পথিককেই ডেকে চলছে। কোথাও লাল, কোথাও সাদা, কোথাও হলুদ রঙে ভেঙে পড়ছে ফুলের হাসি। মৌলভীবাজার পৌরসভা প্রাঙ্গণের ওই কাঁঠালচাঁপাগাছের উল্টে দিকে পুকুরপাড়ে ফুটেছে নাগচাঁপা ফুল। সবুজ পাতার চূড়ায় অশান্ত সময়ের বিপরীতে সাদা সাদা ফুল শান্তির পায়রা হয়ে পালক মেলছে, হাওয়ায় ভাসছে।
![]() |
শহরের অনেকগুলো স্থানে জ্বলছে কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুন। মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট রোডে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পৌর প্রাঙ্গণের দক্ষিণের পথের পাশে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। অনেকগুলো ফুল ফুটেছিল, কিছু ঝরে গেছে, কিছু এখনো থেকে গেছে। নিচে ঝরে পড়ছে পাপড়ি। তবে শুধু ওই স্থানেই কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে, এ রকম নয়; শহরের অনেকগুলো স্থানে জ্বলছে কৃষ্ণচূড়ার লাল ভাসমান আগুন। একই সড়কের (কোর্ট রোড) জেলা প্রশাসকের বাসভবনের কাছে, কোর্ট এলাকাতেও কৃষ্ণচূড়া ফুল আছে। শাহ মোস্তফা সড়কের কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে লাল, কিছুটা হলুদে মেশা কৃষ্ণচূড়া। সৈয়দ মুজতবা আলী সড়কের মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে বেশ কিছু গাছে জ্বলে আছে কৃষ্ণচূড়ার লাল শিখা। কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে মনু সেতুসংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কাছে। ফরেস্ট অফিস সড়কের লোকনাথ মন্দিরের কাছে বিশাল গাছে এখন লাল রঙের জোয়ার। অনেকটা দূর থেকে সেই আগুন চোখে পড়ে। আরও বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়া ফুটে আছে গ্রীষ্মকে জাগিয়ে।
কোর্ট রোডে জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছে আরও কিছু ফুল আছে। একটি স্থানে দেখা গেছে জলাভূমির ফুল হিজল, সে–ও কেমন উজাড় হয়ে ফুটছে। শহরে হাওরপারের এমন ফুলের সঙ্গে কদাচিৎ দেখা হতে পারে। ডালে ডালে ঝুমকালতার মতো ফুটে আছে হিজলের ফুলগুলো। সকালবেলা এক-দুটি করে ঝরে পড়ছে নিচে। বাংলোর প্রাচীরের বাইরে সড়কের ফুটপাতে এই ঝরা ফুলদের দেখা পাওয়া যায়। হিজল ফুলের দক্ষিণ পাশেই আছে সোনালুর গাছ, সেখানে এখন হলুদ রঙের তৈলচিত্র আঁকা হয়ে আছে। নারীর কানের দুল হয়ে সোনালু ঝুলছে। গাছের শাখা ভরে ফুটেছে ফুলের অলংকার। এই কদিন তারা স্থানটিকে সোনার রঙে মুড়িয়ে রাখবে।
![]() |
সাদা সাদা ফুল যেন পায়রা হয়ে হাওয়ায় ভাসছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পাশেই একাধিক গাছে অর্কিড ফুল ফুটেছে। লতায় জড়িয়ে থাকা গাছের শরীরে থোকা থোকা বেগুনি রঙের অর্কিড ফুল ঝুলে আছে। কাছেই আছে কাঠগোলাপসহ আরও কিছু ফুল। কয়েকটি স্থানে ফুটেছে লাল সোনাইল। কী যে মায়ার সংসার পেতেছে তারা শাখাগুলোয়! ডাল উপচে ফুল ফুটেছে। শহরের গির্জাপাড়ার পথের পাশে একটি বাসায় এ রকম একটি লাল সোনাইল দেখা গেছে। বেশ উঁচু গাছ, বেশ দূর থেকেই দেখা যায় ফুলগুলো।
অন্যদিকে টিবি হাসপাতাল সড়কের স্টেডিয়াম এলাকাতে আরও একটি লাল সোনাইলগাছ ফুলে ফুলে সেজে আছে। ওসব গাছে যেন ‘রাঙা রাজকন্যা’রা এখন কখনো নাচের মহড়া দেয়, হাওয়া এলে কখনো নেচেই ওঠে। আরও দু-একটি স্থানে ছোট আকারের গাছে অল্প কিছু ফুল ফুটতে দেখা গেছে লাল সোনাইলের। গীর্জাপাড়ার পূর্ব সড়কে, শহরের মুসলিম কোয়ার্টারের আলাউদ্দিন সড়কসহ কয়েকটি স্থানে ফুটতে দেখা গেছে স্বর্ণচূড়া। গাছের নিচে হলুদ ফুল সারা সকাল রাঙিয়ে রাখে। গাছগুলো উঁচু হওয়ায় সবুজ ছাপিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক দূর থেকে এই ফুল চোখে পড়ে। আর জারুল তো আছেই, শহরের অনেকগুলো স্থানে বেগুনি রঙের উচ্ছ্বাস নিয়ে জারুল ফুটেছে।
![]() |
কানের দুল হয়ে সোনালু ঝুলছে। মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট রোডে জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শহরের দালানকোঠার ফাঁকে ফাঁকে নানা রঙের ফুল এখন অনেক ছুটে চলা, ব্যস্ততা, ক্লান্তি-অবসাদের ভেতর একটু হলেও শান্তি-স্বস্তির উৎস হয়ে আছে। উৎপল কুমার বসুর কবিতা ভূমিকার কিছু পঙ্ক্তির মতো ফুলগুলো যেন বলছে, ‘সুখ-দুঃখের সাথি, তুমি আমার সঙ্গে চলো/ বাতাস বইছে বেরিয়ে-পড়ার বাতাস, গাছের কাছে বলো/ আমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুক, পথের কাছে বলো...।’