প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
![]() |
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি সদস্যরা। আজ শুক্রবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা কিছু মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেন বিএসএফের সদস্যরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের নলগড়িয়া ও নোয়াবাদী সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়নের (সরাইল) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতভর সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
৪ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের পাঁচ জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ৩১৮ জনকে ঠেলে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪ মে মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে, ৭ মে খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা দিয়ে যথাক্রমে ৬৬ ও ৭৮, মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে (৭, ৮, ১৪ ও ১৫ মে) ১৪৮ এবং ১৪ মে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ১২টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানোর জন্য কিছু মানুষকে জড়ো করে বিএসএফ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি জানতে পেরে সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি। পাশাপাশি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর, নলঘরিয়া, মেরাসানী, নোয়াবাদী সীমান্তে শত শত লোক নিয়ে জড়ো হন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে লোকজনকে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি বেড়ে গেলে পিছু হটে বিএসএফ।
বর্তমানে
পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে উল্লেখ করে সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)
সদস্য বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘রাত দুইটার দিকে বিজিবির মাধ্যমে খবর পেয়ে এলাকার
মানুষকে সীমান্তে যেতে বলি। লোকজন জড়ো হলে বিএসএফ সরে যায়।’
আরেক ইউপি
সদস্য মামুন চৌধুরী বলেন, ‘বিএসএফের সদস্যরা সীমান্ত দিয়ে পুশইনের চেষ্টা
করলে এলাকায় মাইকিং করা হয়। বিজিবির সহযোগিতায় লোকজন সীমান্তে গিয়ে জড়ো হয়।
এরপরই তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে কতজনকে সীমান্তে আনা হয়েছিল, সেটা
নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’ তবে এই সংখ্যা কয়েক শ হবে বলে ধারণা করছেন
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি সদস্যরা।
বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়নের আওতায় ৩১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা পড়েছে। ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ আজ শুক্রবার বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কিছু পুশইন করার চেষ্টা করা হবে বলে আমরা জানতে পারি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সীমান্তে ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের আওতাধীন বিজিবির সদস্যদের টহল জোরদার করা হয় ও সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়। রাত একটা থেকে স্থানীয় জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে জড়ো হন। তবে সীমান্ত দিয়ে কোনো পুশইন করার ঘটনা ঘটেনি। কোনো আপত্তিকর বা বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেনি।’
অনেক গণমাধ্যমে গোলাগুলি হয়েছে বলে সংবাদ প্রচার করা হলেও এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ আরও বলেন, ‘যেহেতু কোনো পুশইনের ঘটনা ঘটেনি, তাই কতজনকে পুশইন করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তা বলা মুশকিল। তবে পুশইন করার চেষ্টা হয়েছিল।’
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধনা ত্রিপুরা বলেন, ‘সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সীমান্ত দিয়ে পুশইন করার চেষ্টা হয়েছিল। বিজিবির সঙ্গে স্থানীয়রা একত্র হয়ে প্রতিহত করায় বিএসএফের চেষ্টা সফল হয়নি। আমরা সবাই এখনো সতর্ক অবস্থায় আছি।’