প্রতিনিধি পঞ্চগড়
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
হাসপাতালের শয্যায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে শিশুটি। যৌনাঙ্গের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে অস্ত্রোপচারের পর পরিয়ে দেওয়া হয়েছে স্যানিটারি প্যাড। শরীরে দেওয়া হচ্ছে রক্ত। পাশে বসে বিমর্ষ মুখে তাকিয়ে আছেন শিশুটির বাবা-মাসহ স্বজনেরা। মাঝেমধ্যে এপাশ-ওপাশ করতে চেয়ে অব্যক্ত যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশুটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। সদর উপজেলার একটি গ্রামের চার বছর বয়সী কন্যাশিশুটির সঙ্গে আসলে কী ঘটেছে, তা পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না বাবা-মা। তবে ঘটনাটিকে কেউ কেউ ধর্ষণের চেষ্টা হতে পারে বলে ধারণা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সকালে বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে বের হন শিশুটির ভ্যানচালক বাবা। শিশুটির বড় তিন বোন চলে যায় স্কুলে। সকাল ১০টার পর চার বছর বয়সী শিশুটি মায়ের সঙ্গে বাড়ির পাশের বাদামখেতে বাদাম তুলতে যায়। কিছুক্ষণ পর শিশুটি একা বাড়িতে ফিরে আসে। দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের এক স্বজনের মাধ্যমে শিশুটির মা খবর পান, তাঁর মেয়ের যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত ঝরছে। তিনি বাড়িতে গিয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় একজন পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পরে তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রক্ত বন্ধ করতে সেখানে বেলা আড়াইটার দিকে শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হয়।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার বাচ্চার কী কারণে এমন হয়েছে, এখনো বুঝতে পারছি না। ঘটনার পর থেকে বাচ্চাটা কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে গেছে। কিছু বলতেও পারেনি। যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কিছুক্ষণ আগে চোখ মেলে শুধু একবার “বাড়ি যাব” বলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি তো বাড়িতে ছিলাম না। ঘটনার পর শুনেছি স্থানীয় লোকজন সন্দেহ করে আমার ছোট ভাইকে (৩০) ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গিয়েছিল। পরে আমি ফোন করে বলেছি, আগে বাচ্চাটা সুস্থ হোক। ওর কাছে শুনে পরে ব্যবস্থা হবে। পরে তাঁকে আমার জিম্মায় দিয়েছে।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল কাদের বলেন, শিশুটিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার যৌনাঙ্গ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রক্ত বন্ধ করতে তাকে অস্ত্রোপচারকক্ষে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেটির জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন হবে। মেডিকেল বোর্ডই এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাতে পারবে।শিশুটির এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বলেন, শিশুটির শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। মূল ঘটনা সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারছে না। কেউ কিছু দেখেনি। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ আর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শিশুটির এক চাচাকে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে কিছুক্ষণ আটকে রাখা হয়েছিল। পরে তাঁকে শিশুটির বাবাসহ তাঁদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।