প্রতিনিধি জয়পুরহাট

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কানুপুর এলাকায় অবস্থিত সএসবি পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি কমপ্লেক্স  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পোলট্রিশিল্পে এগিয়ে থাকা জেলা জয়পুরহাটে এক মাস ধরে এক দিনের মুরগির বাচ্চার দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কমে গেছে। প্রতিটি বাচ্চা দুই থেকে আড়াই গুণ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। হ্যাচারিমালিকেরা বলছেন, এতে তাঁরা কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে জয়পুরহাটের পোলট্রিশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে।

হ্যাচারিমালিকেরা বলেছেন, এক দিনের মুরগির বাচ্চার দামের এই ধসের পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। কয়েক বছর ধরেই লোকসানে পড়ে ছোট খামারগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাচ্চার উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা কমে গেছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে বাচ্চা মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় অনেক খামারি বাচ্চা কিনছেন না।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি মুরগির খামার আছে। এখানে ৫৩টি হ্যাচারি থেকে বছরে প্রায় ৮ কোটি এক দিনের বাচ্চা উৎপাদিত হয়। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এখানেই উদ্ভাবিত হয়েছে সোনালি জাতের মুরগি। এর স্বাদ অনেকটা দেশি মুরগির মাংসের মতো। এ কারণে জেলাজুড়ে বেশির ভাগই সোনালি জাতের মুরগির খামার।

খামারি ও হ্যাচারিমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে মুরগির খাদ্য ও ওষুধের দাম বেড়েছে। বাজারও অস্থির। এক চালানে লাভ হলেও পরের চালানে বড় ধরনের লোকসান হচ্ছে। আগে যেভাবে খামারিরা বাকিতে বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধ পেতেন, এখন তা মিলছে না। এ কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে মুরগির বাজারে দাম তুলনামূলকভাবে কম। এতে খামারিরা বাচ্চা নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ কারণে হ্যাচারিতে উৎপাদিত এক দিনের বাচ্চার বিক্রি কমে গেছে।

জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে শেফালি মুরগি খামারের বহুতল ভবনে সোনালী জাতের ও লেয়ার জাতের মুরগি পালন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

হ্যাচারিমালিকদের হিসাবে, বর্তমানে জেলায় ৫৮টি হ্যাচারি সচল আছে। এসব হ্যাচারিতে সাদা ব্রয়লার, রঙিন ব্রয়লার ও সোনালি জাতের বাচ্চা উৎপাদিত হয়। এক দিনের বাচ্চা উৎপাদনে সাদা ব্রয়লারে খরচ পড়ে ৪৫ টাকা, রঙিন ব্রয়লারে ৩৮ ও সোনালি জাতের বাচ্চায় ১৮ টাকা। অথচ এখন বাজারে সাদা ব্রয়লারের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়, রঙিন ১০ আর সোনালি ৫ টাকায়। কখনো কখনো সোনালি বাচ্চা বিক্রি না হওয়ায় বিনা মূল্যে দিয়ে দিতে হচ্ছে।

জয়পুরহাটের জামালগঞ্জের প্রান্তিক খামারি রেজাউল করিম বলেন, ‘একসময় সোনালি মুরগির সোনালি বিপ্লব হয়েছিল। এখন খাদ্য ও ওষুধের দাম চার-পাঁচ গুণ বেড়েছে। উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ক্রমাগত লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছি।’

জামালগঞ্জের শেফালি পোলট্রি খামারের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হ্যাচারিতে সোনালি জাতের বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। প্রতিটি বাচ্চায় খরচ পড়ে ১৮ টাকা। কিছুদিন আগেও তিন থেকে চার টাকা লাভ হতো। এখন বাচ্চা বিক্রি করতে হচ্ছে চার থেকে পাঁচ টাকায়। প্রতিটি বাচ্চায় লোকসান হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকা। এমন অবস্থায় কাউকে মাগনা (বিনা মূল্যে) দিতে চাইলেও নিতে চায় না।’

পদ্মা ফিড অ্যান্ড চিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন, এক মাস ধরে জাতভেদে প্রতিটি বাচ্চায় ১৩ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হ্যাচারিমালিকেরা পথে বসবেন। তিনি আরও বলেন, ‘পোলট্রিশিল্পের দুর্দিনের জন্য মিডিয়াও কোনো অংশে কম দায়ী নয়। আমরা লক্ষ করেছি, যখন একটু মুরগির দাম বাড়ে, তখন মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায়। এখন মুরগি ও মুরগির বাচ্চার দাম কমেছে। এখন আর মিডিয়ায় নিউজ দেখি না।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, জয়পুরহাটের ৫৩টি হ্যাচারিতে বছরে প্রায় ৮ কোটি এক দিনের বাচ্চা উৎপাদিত হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব বাচ্চা বাইরের জেলায় পাঠানো হয়। মুরগির বাজার ভালো থাকলে খামারিদের চাহিদাও বেশি থাকে। এখন বাজার পড়ে যাওয়ায় চাহিদা কমেছে। তবে মুরগির বাচ্চার এ দাম স্থায়ী হবে না।