প্রতিনিধি পঞ্চগড়

পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে বিএসএফের ঠেলে পাঠানো নারী ও শিশুসহ ২১ জনকে পুলিশি পাহারায় সদর উপজেলার ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমিউনিটি সেন্টারে রাখা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ঠেলে পাঠানো নারী, শিশুসহ ২১ জনকে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমিউনিটি সেন্টারে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই ২১ জনকে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধায়নে সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমিউনিটি সেন্টারে আনা হয়। এতে পুলিশ ও বিজিবি সহায়তা করে।

ইউএনও জাকির হোসেন মুঠেফোনে বলেন, হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকের পরিবার যোগাযোগ করছে। সবার পরিবারের লোকজন চলে এলে পুলিশের মাধ্যমে তাঁদের হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বিওপির আওতাধীন সীমান্তের ৭৫৭ নম্বর মেইন পিলারে ১০ নম্বর সাবপিলার সংলগ্ন সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ী এলাকা দিয়ে ওই ২১ জনকে ঠেলে পাঠিয়ে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ সময় সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবি তাঁদের আটক করে বিকেলে পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ২১ জনের মধ্যে ২২ বছর বয়সী একজন তরুণ, ৩ মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ জন শিশু-কিশোর এবং ১৯ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৬ জন নারী আছেন। তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা ও নড়াইল জেলায়। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতেই ছিলেন এবং প্রাপ্তবয়স্করা সেখানে বিভিন্ন কাজ করতেন। তাঁদের ভারতের গুজরাট থেকে ভারতীয় পুলিশ আটক করে বিমান ও বাসযোগে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে এসে গতকাল বুধবার বিকেলে ৯৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের টিয়াপাড়া ক্যাম্পে হস্তান্তর করে। পরে টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় (পুশ ইন)। যদিও ঘটনার পর বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকে বিএসএফ পুশ ইনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। কমিউনিটি সেন্টারের ঘরের মেঝেতে কেউ শুয়ে, কেউ বসে সময় কাটাচ্ছেন। হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, পরিবারের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিন মাস বয়সী একটি শিশু অসুস্থ হওয়ায় তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসুস্থ শিশুটির দাদি ও মা–বাবা জানান, বিএসএফ সীমান্তে পার করে দেওয়ার সময় তাঁরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন। এ জন্য শিশুটির ঠান্ডা লেগেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে আসার পর অন্যরা সবাই ভালো আছেন।

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দিকনির্দেশনায় আমরা এখানে ২১ জনের খাবারের ব্যবস্থা করছি। এখানে পুলিশের পাশাপাশি আমাদের গ্রাম পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।’

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ হিল জামান জানান, ওই ২১ জনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।