পুলিশ | ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পরও গোছালোভাবে দায়িত্ব পালনে ফিরতে পারেনি পুলিশ বাহিনী। জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়, কয়েকটি বিশেষ বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় পুলিশের মূল দায়িত্ব পালনে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলেছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী ব্যাপক রদবদলসহ নানা কারণে এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি পুলিশ বাহিনী। এরই মধ্যে কিছু অপ্রত্যাশিত কাজ করতে হওয়ায় মাঠের পুলিশ বাড়তি চাপে পড়ছে।

সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে পুলিশ বাহিনীকে যেসব বড় কাজে উল্লেখযোগ্য রকম সময় ও শ্রম দিতে হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিজেদের দ্বন্দ্বজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অভিযুক্তদের তালিকা তৈরি ও গ্রেপ্তার, মহানগরগুলোয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মোকাবিলা ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংকট।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দেড় দশকের শাসনের অবসানে নতুন উদ্যমে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সূত্রে মাথাচাড়া দিয়েছে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে মাঝেমধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের সংঘর্ষ হচ্ছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত বছরের আগস্ট থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। এসব সংঘাত নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন রাখতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে বহু মামলা হয়েছে। জুলাই ও আগস্টের মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার সরকারি তাগিদ থাকায় পুলিশের প্রতিটি বিশেষ ইউনিট ও তদন্ত সংস্থা এ কাজে ব্যস্ত থাকছে। গত মাসে দেশের সব থানার পুলিশকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ অন্যান্য মহানগরে পুলিশকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক ও সংগঠনের আন্দোলন, মিছিল-সমাবেশ ও একে কেন্দ্র করে ঘটা সহিংসতা মোকাবিলায় কাজ করতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশের নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা পরিকল্পনায় অতিরিক্ত চাপ পড়ছে।

ছাত্র-জনতার ওপর হত্যা-নির্যাতন চালানোর দায়ে আগস্ট অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা পুলিশের স্থাপনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়সহ ব্যাপক রদবদল করে। ১৮৭ পুলিশ এখনো পলাতক। শীর্ষ পর্যায় থেকে থানা স্তরের কর্মকর্তারা নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়, রাজনৈতিক চাপ সামলানো এবং পেশাগত নীতি বজায় রাখা—এই ত্রিমুখী চাপের মুখে রয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে রাজধানীতে খুন, ছিনতাই, মাদক ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে গড়ে ২২ শতাংশ। ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। কিন্তু এসব অপরাধ ঠেকাতে মাঠে পর্যাপ্ত টহল নেই। পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, বাহিনীর বড় অংশকে রাজনীতিকেন্দ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের পরিবেশ না থাকলে এ ধরনের ছন্দপতন চলতেই থাকবে। পুলিশকে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশ পেশাদারির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি আসামি গ্রেপ্তার, মামলার তদন্তসহ অন্যান্য দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকে। একটি দায়িত্বের ওপর অন্যটির প্রভাব পড়ার কোনো অবকাশ নেই।