নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন। আজ সোমবার, তিতুমীর কলেজের ছাত্র সংসদের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সাত কলেজকে নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, সাত কলেজ থেকে তিতুমীরকে আলাদা করে স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
আজ সোমবার দুপুরে তিতুমীর কলেজের ছাত্র সংসদের সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্য’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রফিক উদ্দীন রায়হান।
লিখিত বক্তব্যে রফিক উদ্দীন রায়হান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে শিক্ষা সিন্ডিকেটের প্রেসক্রিপশনে চাপিয়ে দেওয়া কথিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাব সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের যে ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিন।’
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—তিতুমীরের জন্য স্বতন্ত্র কাঠামো গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা, কলেজের জন্য জমি বরাদ্দ, শিক্ষার্থীদের আবাসন–সংকট নিরসন, শিক্ষক–সংকট সমাধান, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার-গ্রন্থাগার নির্মাণ এবং সহশিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রমে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া।
দ্রুত এসব দাবি পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে অতীতের যেকোনো কর্মসূচির চেয়ে ‘কঠিনতম কর্মসূচি’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় লিখিত বক্তব্যে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৯৪ পৃষ্ঠার একটি লিখিত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল। সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পক্ষে তাঁর একান্ত সচিব এম আমিনুল ইসলাম সেটা গ্রহণ করেন। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়েও প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যৌক্তিকতা এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণ করে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কোনো সাড়া না পেয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে একটি ‘শিশুসুলভ’ উত্তর জানা যায়—প্রতিবেদনটি নাকি মন্ত্রণালয় থেকে হারিয়ে গেছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত ৩ ডিসেম্বর ‘সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যৌক্তিকতা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নিমিত্তে কমিটি গঠন’ শিরোনামে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। যদিও সেই কমিটির প্রতিবেদন আজও প্রকাশ করা হয়নি। কোনো নির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর বাকি ছয়টি কলেজের সঙ্গে মিলিয়ে সাত কলেজের জন্য আরেকটি প্রহসনমূলক কমিটি গঠন করা হয়। রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে ওই প্রহসনের কমিটির ডাকে সাড়া দিলেও গত ৯ জানুয়ারি ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে উপস্থিত হয়ে আবার তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে। তাঁদের নিঃশর্ত অবস্থান স্পষ্ট করে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত সাত দফার মধ্যে ছয়টি দফা মেনে নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যক্রম শুরুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি; বরং সেই প্রহসনের কমিটির মাধ্যমেই তথাকথিত ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ (ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারি তিতুমীর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আহমেদ বলেন, ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন অন্তর্বর্তী প্রশাসন করা হয়েছে, সেভাবে তিতুমীর কলেজকে সেখান থেকে আলাদা করে প্রশাসন গঠন করে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে এখনো ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।