প্রতিনিধি রাজশাহী
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা ভোগ শেষে ভারতীয় নাগরিক আরসালান হোসেনকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রোববার বেলা ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ সীমান্তে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে গ্রেপ্তার হওয়ার দুই মাস পর আদালত ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। অর্থাৎ রায় ঘোষণার দেড় মাস আগেই সাজা খাটা শেষ হয়েছিল ভারতীয় নাগরিক আরসালান হোসেনের। কিন্তু আইনি জটিলতায় বাড়ি ফেরা হচ্ছিল না তাঁর। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ মাস কারাগারে কাটিয়ে অবশেষে রোববার আরসালান বাড়ি ফিরলেন।
যুবক আরসালানের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে। তাঁর বাবা মৃত হামিদ হোসাইন। তিনি ছিলেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। আজ তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরানো হয়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আমান উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলার আমান উল্লাহ জানান, গত বছরের ২৯ জুলাই আরসালান রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পুলিশ তাঁর নামে একটি মামলা করে পরদিন কারাগারে পাঠায়। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর আদালত অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। বন্দীর হাজতবাস বিবেচনায় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বরেই তাঁর সাজা ভোগের মেয়াদ শেষ হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশনের অনুমোদনের পর আজ তাঁকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। কারা কর্মকর্তা, বিজি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করে।
আরসালান হোসেনের বিষয়টি গত ২২ ফেব্রুয়ারি জানতে পারেন ঢাকার সাংবাদিক শামসুল হুদা। তিনি দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটকে থাকা বিদেশি নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন। আরসালানকে ফেরাতেও ঢাকায় বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করেন তিনি। প্রত্যর্পণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে ঢাকা থেকে তিনি রাজশাহী ছুটে আসেন। আজ কারাগারের সামনে থেকে আরসালানকে নিয়ে কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যান সোনামসজিদ স্থলবন্দরেও। ভারত থেকে সেখানে এসেছিলেন আরসালানের ভাই ফয়সাল হোসেন। তিনি ভাইকে বুঝে নিয়ে বাড়ি রওনা দেন। আর সোনামসজিদ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন শামসুল হুদা।
ফেরার পথে মুঠোফোনে শামসুল হুদা বলেন, গত বছরের শেষের দিকে দার্জিলিং থেকে কাজের খোঁজে বেঙ্গালুরু যান আরসালান। সেখানে কিছুদিন শেফ (বাবুর্চি) হিসেবে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। কিছুদিন পর ভালো কাজের আশায় পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় আসেন। সেখানে কিছুদিন কাজ করে বন্ধুর পরামর্শে রেস্তোরাঁয় কাজ করার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তারপর প্রায় ছয় মাস ধরে কাজ করছিলেন ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয়। কিন্তু জুলাই–আগস্টের আন্দোলনের অস্থির সময় তিনি আতঙ্কিত হয়ে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে রাজশাহী সীমান্তের দিকে রওনা হন। সে সময় সীমান্তে কড়াকড়ি থাকার কারণে তিনি নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
শামসুল হুদা জানান, সাজা শেষ হলেও বিভিন্ন আইনি জটিলতায় আরসালানের ভারতে ফেরাটা আটকে গিয়েছিল। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানতে পারেন, আরসালানের ভাই ফয়সাল হোসেন রাজশাহীতে অবস্থান করছেন ভাইয়ের মামলা নিষ্পত্তির জন্য। ফয়সালের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি জেনে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাবাসনবিষয়ক চিঠি ও ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে গত ২১ এপ্রিল ছাড়পত্র পাওয়া যায়। এরপর সব প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে তাঁর ভাইয়ের কাছে তুলে দিয়ে এলেন।